ধ্বংসের মুখে এয়ারলাইন্স: যাত্রী কমেছে ৯০ শতাংশ
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে যাত্রী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় মারাত্মক সংকটে পড়েছে এয়ারলাইন্স বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব), ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ সূত্র জানায়, গত মাসের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার অনেক দেশে ভ্রমণকারী যাত্রীর সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কমে গেছে।

ছবি: এএফপি
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে যাত্রী সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় মারাত্মক সংকটে পড়েছে এয়ারলাইন্স বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব), ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ সূত্র জানায়, গত মাসের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার অনেক দেশে ভ্রমণকারী যাত্রীর সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কমে গেছে।
আটাবের বিদায়ী সভাপতি এসএম মনজুর মুর্শেদ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম ভ্রমণকারী যাত্রীর সংখ্যা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কমেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের যাত্রীর সংখ্যা ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ এখন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশের বাইরে যাচ্ছে না। সরকারও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশের বাইরে যেতে নিষেধ করেছে। যার প্রভাব সবার ওপরেই পড়েছে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা-চীন রুটের ফ্লাইটগুলো স্বল্পসংখ্যাক যাত্রী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় সৌদি সরকার ওমরাহ হজ যাত্রীদের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সৌদির এই সিদ্ধান্তের কারণেও বাংলাদেশের এয়ারলাইন্স ক্ষতির মুখে পড়েছে।
আটাব ও টোয়াব কর্মকর্তারা বলেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, উড়োজাহাজের ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
টোয়াব কর্মকর্তা তাসলিম আমিন বলেন, ‘যাত্রীরা প্রতিদিনই টিকিট বাতিল করছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিমান ও বেসরকারি এয়ালাইন্সকে বড় ধরনের মাশুল গুনতে হবে।’
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ২ হাজার ৯ শ জন মারা গেছে। এ ছাড়া, বিশ্বের ৫৩টি দেশের ৮৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা দেশের তালিকায় রয়েছে— অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইরান, ইতালি, জাপান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কাতার, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) সতর্ক করেছে, চলতি বছরে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এই শিল্প ২৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চীন ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের এয়ারলাইন্সের ওপর এই প্রভাব বেশি পড়ছে।
করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবের কারণে বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছে।
মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনবিসি জানায়, নতুন করোনাভাইরাসটির দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এয়ারলাইন্স ও ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে। এমন পরিস্থিতি আসতে পারে গত কয়েক দশকে তা কল্পনাও করা যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার গ্লোবাল বিজনেস ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক বার্তায় জানায়, চলতি বছর ভাইরাসটির প্রভাবে ভ্রমণ শিল্পের প্রায় ৫৬০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে।
আইএটিএ’র প্রতিবেদন নিয়ে বিমান ও আটাব কর্মকর্তারা বলেন, বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্স শিল্প মারাত্মক হুমকিতে আছে। যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতি মুখে পড়বে শিল্পটি।
ওমরাহ যাত্রীদের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তাসলিম বলেন, প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি ওমরাহ পালনের জন্য ভিসা পেয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে সৌদি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যে কারণে তারা আপাতত ওমরাহ পালন করতে পারবেন না।
ঢাকা বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৭২ লাখ যাত্রী ভ্রমণে যান। অর্থাৎ, প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার যাত্রী এখান থেকে ভ্রমণ করেছেন।
গত বছর এই সংখ্যা বাড়লেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে।
সূত্র জানায়, গত মাসে বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার যাত্রী ভ্রমণ করেন।
সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২৮টি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে। যাত্রী সংখ্যা কম থাকায় কয়েকটি এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে বিমানের যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত সব এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রেই এটা ঘটছে। শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
ট্যুর অপারেটর কোম্পানি জার্নি প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশে আসা কমিয়ে দিয়েছে। দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য এটি অশুভ লক্ষণ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্যুরিজম ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট দল আবশ্যক। যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের দিক-নির্দেশনা দেবে।’
Comments