বিমা খাত প্রযুক্তিনির্ভর করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃসময়ে বিমা থাকার বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি আধুনিক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিমা সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত ও এর পরিসেবা আরো উন্নত করতে বিমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃসময়ে বিমা থাকার বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি আধুনিক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিমা সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত ও এর পরিসেবা আরো উন্নত করতে বিমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমার যে কোন কিছু অর্থাৎ বিমার দাবি নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে বিমা সেবাকে আরো সহজীকরণে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য্য। এটা করলে তবে দুর্নীতি দূর হবে। এর থেকে মানুষ উপকার পাবে।’

‘কাজেই সেক্ষেত্রে বিমা খাতটাকেও আপনাদের প্রযুক্তি নির্ভর করতে হবে,’ বিমা কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিমা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই ইন্সুরেন্সটা করা থাকলে পরে তাদের যে সুবিধাটা হয় সেটা একটু দেখা দরকার এবং এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিটা এখন কার্যকর করা দরকার।

সরকার প্রধান বলেন, ‘পৃথিবীর সবদেশে এটা হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের দেশেও পুরো বিমা পদ্ধতিটাকে আপনারা ডিজিটাল সিস্টেমে দাঁড় করাবেন।’

তিনি বলেন, ‘এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি, সারাদেশে ব্রড ব্র্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছি, মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে, ফোরজি আমরা চালু করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলবো বিমাটাকে আপনারা আরো মানুষের কাছে নিয়ে যান। এখন আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ কিন্তু অনেক বেশি সচেতন। কাজেই সেদিকে থেকে আমরা মনে করি তাহলে মানুষের আরো আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের সব বিমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে এলে বিমা খাতের উন্নয়নের সাথে সাথে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হবে এবং কেউ ফাঁকি দিতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে বিমার গ্রাহকদেরও আস্থা এবং বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। বিমা খাতের প্রিমিয়ামসহ দেশের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।’

‘এছাড়া বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ‘স্টেট-অব-দি-আর্ট টেকনোলজি’ সম্পন্ন ‘ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম’ (ইউএমপি) পদ্ধতি চালু করেছে। যা গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে বলে আমি বিশ্বাস করি’ একথা উল্লেখ করে এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিমা খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জনকে ‘বিমা পদক’ বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) ‘বিমা ম্যানুয়েল’ এবং ‘বিমা নির্দেশিকা’ নামে দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

দেশের বিমা খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাড়ি যারা ব্যবহার করেন তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির ইন্সুরেন্সটা সঠিকভাবে করে নাই। থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স, সামান্য কিছু টাকা দিলেই সার্টিফিকেটটা পেয়ে যায় এবং গাড়ি চালাতে পারে। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন কিন্তু আর কিছুই পায়না।

শেখ হাসিনা বলেন, কারো গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সে যে টাকা পেতে পারে বা ইন্সুরেন্সের টাকায় গাড়ি মেরামত করাতে পারে, সে বিষয়টা মানুষকে আরো ব্যাপকভাবে জানানো দরকার।

তিনি তার নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘কেউ যদি আপনাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে তাহলে তার ইন্সুরেন্স থেকেই আপনার জরিমানার টাকা পাওয়া দরকার। যদিও এই সিস্টেম আমাদের দেশে এখনও শক্তিশালীভাবে গড়ে ওঠে নাই। আমি মনে করি এটা গড়ে ওঠা দরকার।’

তিনি বিমা কেম্পানির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিমা করলে মানুষ যে সুবিধাগুলো পাবে সেগুলো মানুষের কাছে আরো ব্যাপভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।’

এক্ষেত্রে তার সরকারের কৃষকদের জন্য কৃষি বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, রেল যাত্রীদের জন্য বিমা এমনকি ভবনের জন্য বিমা করার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের লেখাপড়া চালানো এবং সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিতের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই তাদের নামে একটি করে বিমা এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্যও বিমা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমা মালিকদের প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা’ চালুর বিষয়টি তার সরকার পরিকল্পনায় রেখেছে।

তিনি এ সময় স্বাধীনতার পর পাটের গুদামে ঘন ঘন আগ্নিকান্ডের উদাহরণ টেনে বিমার টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য একে ‘এক ধরনের ষড়যন্ত্র’ ছিল স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার সরকার গঠনের পর ঘন ঘন গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লাগার বিষয়টিকেও ‘ক্ষেত্র বিশেষে এই একই কারণে সৃষ্ট’ বলেও উল্লেখ করেন।

‘আমি তদন্ত শুরু করলাম এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে লাগালাম যে কেন, কীভাবে কিসের জন্য অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বা ফেইক কি না, সে সময় কিছু কিছু ঘটনা ধরাও পড়ল। আর কিছু কিছু লোককে আমি নিজেই ধরে ফেললাম’ বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি নাম বলতে চাই না। কিন্তু আমার যেহেতু বলার অধিকার আছে তাই বললাম।’

শেখ হাসিনা বিমা কোম্পানির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের যারা পর্যবেক্ষক হবেন বা ঘটনার ইন্সপেকশনে যারা যাবেন তাদেরকে ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সৎ লোক হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরা বিমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামটা যাতে সঠিকভাবে দেয় সেটাও যেমন প্রয়োজন, বিমার টাকা যেন পায় এবং সঠিকভাবে পায় সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। যতটুকু ক্ষতি ততটুকুই যেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফাঁকি দিয়ে নেয়ার প্রবণতাটাও দূর করতে হবে।’

বিমা করে অর্থ উপার্জনটা এক সময় মধ্যবিত্ত এবং চাকরি প্রত্যাশীদের ভালো উপার্জনের একটি পথ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা এখন আর তেমনভাবে নেই। আমি মনে করি এটা আবার ফিরে আসা উচিত।

তার সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের বেকার সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমা কোম্পানির মালিক যারা রয়েছেন তারা যদি এজেন্ট হিসেবে কাজ দেন তাহলে অনেক যুবক এবং বিশেষ করে মেয়েরা কাজ করতে পারে ফলে কর্মংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব দূর হবে।’

 

Comments

The Daily Star  | English

Army given magistracy power

In order to improve law and order, the government last night gave the power of magistracy to commissioned army officers for 60 days.

2h ago