একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০

এবার একটি বইও প্রকাশ করেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মিলে যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার বই প্রকাশ করেছে, সেখানে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নতুন কোনো বই। অথচ মেলায় মাসজুড়ে ঢাবির একটি স্টল ঠিকই ছিল। স্টলে প্রদর্শন করা হয়েছিল পুরনো কিছু বই।
একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০। ছবি: রাফিদ ইয়াসার/স্টার ফাইল ফটো

এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মিলে যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার বই প্রকাশ করেছে, সেখানে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নতুন কোনো বই। অথচ মেলায় মাসজুড়ে ঢাবির একটি স্টল ঠিকই ছিল। স্টলে প্রদর্শন করা হয়েছিল পুরনো কিছু বই।

মাসজুড়ে বিভিন্ন সময় বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে এই প্রতিবেদক দেখেছেন, বইপ্রেমীরা মাঝেমধ্যেই স্টলটিতে আশা নিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ফিরছিলেন ততটাই হতাশা নিয়ে।

ঢাবি’র প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বছর তাদের নতুন তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৮ সালে দুটি, ২০১৭ সালে একটি, এবং ২০১৬ সালে চারটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৫ ও ২০১৪ সালে কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। চলতি বছরেও কোনো নতুন বই প্রকাশ করতে পারেনি প্রায় শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থাটি।

বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, এবারের মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মিলে মোট বই প্রকাশ করেছে ৪ হাজার ৯১৯টি।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান ও প্রকাশনার চিত্র কতটা ভালো তার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে-বিদেশে কতটা সুনাম পাবে। বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন র‌্যাংকিংয়ের তলানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। এ ধরনের পরিস্থিতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবকে ম্লান করে দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একটা সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল লেখক আর গবেষকদের আড্ডার জায়গা। যেখানে জ্ঞান চর্চা হতো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কিছু বই বের হতো। এখনকার পরিস্থিতি খুবই লজ্জাজনক।’

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘গত কয়েক মেয়াদে যারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই এসব নিয়ে ভাবেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ফিরিয়ে আনতে চাইলে প্রথমে প্রশাসনকেই উদ্যোগী হতে হবে।’

প্রবীণ এই অধ্যাপকের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে বই প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা অন্যতম একটি কারণ, যে জন্য অনেক শিক্ষকই আজকাল বাণিজ্যিক প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে বই বাজারে আনছেন। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে তাহলে ভালো পাণ্ডুলিপি আসবে।

প্রকাশনা সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৯৯ বছরে মাত্র ১৮০টি বই প্রকাশ করেছে। ১৯২৬ সালে Michel West এর লেখা “The Construction of Reading Material for Teachers of Foreign Language” ছিল প্রথম প্রকাশিত বই।

বইমেলায় স্টলের কর্মকর্তা মো. শহীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বইয়ের তালিকা সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে গত বছরের জুনে। প্রতি বছর এ সময়েই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। তবে নতুন বই আসলে সাময়িক তালিকা বানানো হয়। এ বছর যেহেতু কোনো নতুন বই নেই তাই তালিকাও করা হয়নি।

মো. শহীদের দাবি, এ বছর বেশ কয়েকটি পুরনো বইয়ের নতুন সংস্করণ করা হয়েছে। যেগুলো খুব ভালো বিক্রি হয়েছে।

বইমেলায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বই কেনেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা তরুণ গবেষকদের বিশেষ নজর থাকে ঢাবি স্টলের দিকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিক গালিব ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানের মান আগের চেয়ে খারাপের দিকে। তারপর এসব বিষয়। আমরা আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বই প্রকাশে মনোযোগী হবে।’

জানতে চাইলে ঢাবি প্রকাশনা সংস্থার উপ-পরিচালক ভবরঞ্জন চক্রবর্তী নিজেও স্বীকার করে নেন তাদের দীর্ঘসূত্রিতার কথা।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রথমে আমাদের একটি কমিটি পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে। পরে তা দুজন সিনিয়র শিক্ষক দিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। আনুষঙ্গিক নানা বিষয় মিলে অনেক সময় চলে যায়।’

তিনি জানান, এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই অনেক শিক্ষক এখন তাদের বই প্রকাশ করেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রকাশনা থেকে।

‘ভবিষ্যতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করব কিভাবে এটাকে আরও সহজ করা যায়। সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হলে হয়তো অনেকেই আসবেন। বই প্রকাশও বাড়বে,’ যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

7h ago