গ্রন্থাগারের বইয়ে ধুলো, শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিসিএস গাইড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ রাজধানীর গ্রন্থাগারগুলোতে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক বই নয়, বিসিএস কিংবা চাকরি সংক্রান্ত গাইড বই পড়তে যান। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দীর্ঘ লাইন। মূলত বিসিএসসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই কাকডাকা ভোর থেকেই গ্রন্থাগারের সামনে ভিড় শুরু হয়। ছবি: আনিসুর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ রাজধানীর গ্রন্থাগারগুলোতে শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক  বই নয়, বিসিএস কিংবা চাকরি সংক্রান্ত গাইড বই পড়তে যান। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

গত ১ মার্চ দ্য ডেইলি স্টারে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়ায়। গ্রন্থাগারে গিয়ে তারা অ্যাকাডেমিক নয়, সঙ্গে করে নিয়ে আসা বিসিএস কিংবা চাকরি সংক্রান্ত নোট-গাইড বই পড়েন। অর্থাৎ গ্রন্থাগারকে তারা ব্যবহার করছেন চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার কাজে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি গ্রন্থাগারে গিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি। গ্রন্থাগারগুলোতে তিনি ১ হাজার ৩৯৫ জন পাঠককে পেয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫৫ জনই বিসিএস কিংবা চাকরি সংক্রান্ত গাইড বই পড়ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গ্রন্থাগারে ৬১ শতাংশ পাঠক কমেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুই গ্রন্থাগার থেকে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকরা মোট ৯ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫টি বই পড়ার জন্য নিয়েছিলেন। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার বই নেওয়া হতো। কিন্তু, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা নেমে আসে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৩১০টিতে। প্রতিদিন গড়ে ৯৫৬টি বই।

এটা সত্য যে ডিজিটাল যুগে এসে শিক্ষার্থীদের কাগজের বইয়ের ওপর নির্ভরতা কমে যাচ্ছে। এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অ্যাকাডেমিক শিক্ষা অর্জনে ই-বুক পড়তে পছন্দ করেন। এই প্রবণতার কারণে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের গুরুত্বের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন।

এর মূল কারণ, দ্রুত পরিবর্তনশীল চাকরির বাজার। ভালো ফলাফল নিয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করেও অনেকেই তাদের কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না।

এ পরিস্থিতিতে তারা সরকারি চাকরি বেছে নেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। সরকারি চাকরিতে ঢোকার পরীক্ষাও যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক বই না পড়ে, গাইড বই পড়ছেন।

এটাও সত্য যে গ্রন্থাগারের যে রিসোর্স আছে, সেগুলো সেকেলে। যে কারণে শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক কারণে গ্রন্থাগারে যেতে আগ্রহ বোধ করেন না।

যেখানে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়ার কথা ছিল জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চাকরি-কেন্দ্রিক মানসিকতা দুর্ভাগ্যজনক।

আমাদের নীতি-নির্ধারক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Deeper crisis feared as 219 factories shut

With 219 garment factories shut amid worker unrest along the industrial belts yesterday, Bangladesh’s apparel sector is feared to get into a deeper crisis if production does not resume on Saturday after the weekend.  

1h ago