পাহাড় কেটে ‘উন্নয়ন’ আর কতদিন?

২০১৭ সালের জুনে ভূমিধসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে সরকার একাধিকবার পাহাড় কাটা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
Hill Cutting.jpg
বান্দরবানে ২০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ২০টি পাহাড় কেটে ফেলেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

২০১৭ সালের জুনে ভূমিধসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে সরকার একাধিকবার পাহাড় কাটা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বার বার ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করছি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার পরেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা  প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামনে আসেন।

কর্তৃপক্ষের দূরদৃষ্টির অভাব ও পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতার ঘাটতির ফলে পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না।

অতীতের প্রাণহানির মত বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে।

রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বিদ্যালয় ভবন, ইটভাটা নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে এ জাতীয় কার্যক্রম চলছে।

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড (সিএইচটিডিবি) বান্দরবানে রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রায় ২০টি পাহাড় কেটেছে।

গত প্রায় এক বছর ধরেই বান্দরবানে পাহাড় কাটার এই মহোৎসব চললেও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন কেন তা বন্ধের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না, সেই প্রশ্ন সর্বত্র।

যে কোন নীতি ও প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশগত ব্যয় এবং সুবিধাগুলি অবশ্যই যত্ন সহকারে বিবেচনা নেওয়ার কথা।

২০০০ সালে সংশোধিত বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ করেছে।

আইনে বলা আছে, অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কাটার জরিমানা প্রথম অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। পরবর্তী অপরাধে জরিমানা দশ বছরের কারাদণ্ড, দশ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে পড়ছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীব-বৈচিত্র্যের সঙ্গে অসাধারণ ভৌগলিক স্বাতন্ত্র্যযুক্ত এই অঞ্চলের পাহাড়গুলো বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল, ব্যক্তি ও সংস্থা কর্তৃক নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে।

পরিবেশগত অবক্ষয়ের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি বর্ষায় মূল্যবান প্রাণ কেড়ে নেয় ধ্বংসাত্মক ভূমিধস এবং কাদা প্রবাহের পরে পাহাড় কাটা মারাত্মক রূপ নেয়।

পাহাড় এবং পর্বত একটি দেশের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এগুলো বনজ সম্পদ, জীব-প্রজাতি, খনিজ এবং কৃষিগত পণ্যের উৎস ।

যেহেতু পাহাড়গুলো গ্রহের জটিল এবং আত্মনির্ভরশীল বাস্তুতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এগুলো সবচেয়ে সংবেদনশীল।

তাদের উলম্ব মাত্রাগুলোর কারণে তারা তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং নিরোধকের গ্র্যাডিয়েন্ট তৈরি করে।

আইন সাধারণত সমাজে দুটি মূল কার্য সম্পাদন করে। প্রথমত, এটি সুশাসন নিশ্চিত করতে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের একটি উপকরণ।

দ্বিতীয়ত, আইন বিরোধ ও নিষ্পত্তি, পরিবেশ এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের একটি উপকরণ। মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে বিধি ও বিধিবিধানের যথাযথ প্রয়োগ অনিবার্য।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমিধসের ট্র্যাজেডি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ব্যর্থতার একটি বড় উদাহরণ।

সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, পাহাড় কাটা যেটি ভূমিধসের একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করে, তার বিরুদ্ধে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

এছাড়াও, এই জাতীয় অপরাধ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

$8b climate fund rolled out for Bangladesh

In a first in Asia, development partners have come together to announce an $8 billion fund to help Bangladesh mitigate and adapt to the effects of climate change.

5h ago