করোনা ভীতি কাটানোয় কেরালার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে কেরালায়ই প্রথম করোনা আতঙ্ক দৃশ্যমান হয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে কেরালার তিন মেডিকেল শিক্ষার্থী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তারা চীনের উহানের একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে করোনা আতঙ্ক। ৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, ৮ ফেব্রুয়ারি তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এখন দিল্লিসহ আরও কিছু রাজ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করলেও, কেরালার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যে কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে কেরালা সরকার। কেরালা সরকারের অনুকরণীয় ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
করোনাভাইরাস আতঙ্ক দূর করতে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিল কেরালা সরকার-
বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং
কেরালায় ঘুরতে আসা প্রত্যেক বিদেশিকে বিমানবন্দর থেকে একটি স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যেখানে তাদের ভ্রমণের বিবরণ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার তথ্য উল্লেখ করা থাকে। এরপর বিশেষ ডেস্কে নিয়ে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া, কেরালার পাঁচটি বিমানবন্দরের প্রত্যেকটির সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবা যুক্ত করা হয়েছে।
জ্বর, কাশি বা গলা ব্যথা থাকা যে কোনো যাত্রীকে তাত্ক্ষণিকভাবে এসব হাসপাতালে পাাঠানো এবং মেডিকেল অফিসে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ওই যাত্রীর পরিবারকে সব তথ্য জানানো হয়। যদি এসব যাত্রীদের শরীরে কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে কেরালা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে তাদের বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।
পঞ্চায়েতের জন্য নির্দেশ জারি
রাজ্যটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে রাজ্যের পঞ্চায়েত পর্যায়ের সংস্থাগুলোর জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভাইরাসে আক্রান্ত স্থান থেকে আগতদের এবং তাদের কাছাকাছি থাকা মানুষের তালিকা তৈরি করতে হবে। এজন্য একাধিক হেল্পলাইন চালু করেছিল কেরালা সরকার।
সচেতনতা তৈরি
মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিতভাবে ক্যাম্পেইন চালু রেখেছিল কেরালা সরকার। তাদের সচেতনতা বার্তাগুলো ছিল— কাশি বা হাঁচির সময় নাক ও মুখ ঢাকতে টিস্যু বা হাত ব্যবহার করতে হবে। সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন মানুষের সঙ্গে হাত মেলানো বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে।
সংক্রমণ প্রোটোকল
বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, ল্যাব ও পরামর্শ কেন্দ্রকে সরকারের দেওয়া প্রোটোকল কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মানুষের করোনা ভীতি দূর করতে প্রায় ২১৫টি মানসিক স্বাস্থ্য দল কাজ করছে।
পুনপরীক্ষা
ভাইরাস প্রতিরোধে রাজ্যের সব জেলার ব্লাড ব্যাংকগুলো বাধ্যতামূলকভাবে সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারা রক্ত দাতাদের ডাবল স্ক্রিনিং শুরু করেছে এবং যারা বিদেশ ঘুরে এসেছেন তাদের রক্ত নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। রাজ্যের যেসব প্রতিষ্ঠান রক্তদান শিবির পরিচালনা করে তাদের রক্ত দাতাদের ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য বারবার পরীক্ষার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গুজব প্রতিরোধ
কেরালার জেলা পুলিশ প্রধানরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন।
সড়কপথে স্ক্রিনিং
ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি দল সড়ক পথে কেরালায় প্রবেশকারী যাত্রীদের স্ক্রিনিং করছে। তারা নন-কন্টাক্ট ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।
Comments