জাবির দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন আন্দোলনকারীদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর আট মাস পেরোলেও সরকারের উদ্যোগহীনতায় প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
ju main gate
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর আট মাস পেরোলেও সরকারের উদ্যোগহীনতায় প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণপত্র বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার পরও তদন্তে অগ্রগতি নেই অভিযোগ তুলে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর আহবায়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেছেন, দুর্নীতির আলামত ও প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার সময় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিল ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রকার আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি তাদের তেমন আগ্রহই নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে আজ এই সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক রায়হান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে ইউজিসির একজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদের দেওয়া তথ্য-প্রমাণ যথেষ্ট নয়। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, যারা মিডিয়ার সামনে দুর্নীতির স্বীকারোক্তি দিলেন তাদের সঙ্গে কেন কথা বলছেন না?’

রাষ্ট্রীয় নির্লিপ্ততাকে দুর্নীতির ‘গ্রিন সিগনাল’ ভেবেই উপাচার্য নয়া দুর্নীতির দিকে ছুটছেন অভিযোগ করেন তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের তদারক কমিটি সর্বদলীয় করার পরিবর্তে নিজ দলীয় “পকেট কমিটি” দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর সঙ্গে যে দুটি দাবিতে একমত হয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে, তার প্রধান অংশ—মাস্টারপ্ল্যান পর্যালোচনা—না করেই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যেনতেনভাবে আগের মতোই করার প্রয়াস নিয়েছেন উপাচার্য।’

এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে পদ হারানো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে নতুন করে আলোচনায় এসেছে জাবি উপাচার্যের দুর্নীতির খবর। উপাচার্যের দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি লেখেছেন, ‘দোষী হলে গ্রেপ্তার করে জেলে দিন, না হলে দায়মুক্তি দিন!’

তদন্তের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাব্বানী আরও লিখেছেন, ‘এত আলোচনা-সমালোচনা, আন্দোলন, লেখালিখি ও তথ্যপ্রমাণ দাখিলের পরও আজ পর্যন্ত কেন তদন্ত কমিটি হলো না? শিক্ষার্থীরা ভিসি ম্যামের কাছ থেকে টাকা পেয়েছে, দিন-তারিখ উল্লেখপূর্বক প্রকাশ্য স্বীকারোক্তির পরও কেন সেই টাকার উৎস খোঁজা হলো না?’

গোলাম রাব্বানী স্ট্যাটাসে একটি কললিস্ট যোগ করেন। যেখানে জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে গত বছরের ৯ ও ১০ আগস্টের উপাচার্যের ফোনালাপের একটি তালিকা দেখা যায়। সেখানে দুদিনে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে উপাচার্যের ছয় বার কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এসব কথোপকথনের রেকর্ডিং প্রকাশের দাবি তোলেন রাব্বানী।

তবে দ্য ডেইলি স্টার এর পক্ষে এই কললিস্টের সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “রাষ্ট্র নীরব, এমন কথা বলার সুযোগ নেই। আমরা ইউজিসির পক্ষ থেকে তদন্ত করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি পক্ষ বিবাদমান। দুপক্ষই তাদের স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ জমা দিয়েছে। আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করছি। খুব শিগগির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যিনি অভিযোগ করবেন, তাকেই অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। আমরা আন্দোলনকারীদের কাছে উপাচার্যের বক্তব্য সম্বলিত একটি তথ্য চেয়েছি। সেটি পেলে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে পারি।’

‘তবে আমরা খুব শিগগির ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি লিখব। ওই তথ্য পেলে আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়ার কাজ দ্রুত শেষ হবে আশা করি,’ তিনি যোগ করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের জাবি শাখার সভাপতি খান মুনতাসির আরমান বলেন, ‘গত বছর নভেম্বরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ভিসির প্রত্যক্ষ মদদে প্রকাশ্যে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার চার মাস পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় প্রশাসনের তরফে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঘটা এমন একটা হামলায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।’

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএকে ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গায় গাছ কেটে নতুন জায়গা বরাদ্দ দেওয়াকে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের বিচ্যুতি বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। 

তারা বলেন, ‘আইবিএ ভবন নির্মাণ অত্যাবশ্যক হলেও কিসের ভিত্তিতে, কাদের মতামত নিয়ে ওই জায়গায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হলো তা পরিষ্কার নয়। এর আগেও আইবিএ ভবন নির্মাণের জন্য আরেকটি ত্রুটিপূর্ণ নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ও খেয়াল-খুশিমতো আরেকটি জায়গার গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। এই বন উজাড়ের খেলায় কেন মেতেছেন ফারজানা ইসলাম, এটা জাহাঙ্গীরনগরের প্রশ্ন।’

নতুন কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সরকারি নির্লিপ্ততার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী সমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ৮ ও ৯ মার্চ ক্যাম্পাসজুড়ে গণসংযোগ ও ১০ মার্চ দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক থেকে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দিপংকর দ্বীপ ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মিখা পিরেগু ও সম্পাদক রাকিবুল রনি প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago