‘মাশরাফি হলো ফিনিক্স পাখি, ও ফিরে আসবে’

সিলেটের মানুষরা তো আছেনই, অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচ দেখতে ঢাকা থেকেও ছুটে এসেছেন অনেকে। কিন্তু তারা কেউই অধিনায়ককে বিদায় বলতে রাজি নন। তাদের কাছে মাশরাফি যেন ভালোবাসার অন্য নাম, অধিনায়কত্ব থেকে সরে গেলেও যাকে ফিরে পাওয়া যাবে অন্যকোনো উপায়ে।
Mashrafe's Fan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বাংলাদেশ প্রথম দুই ম্যাচ জিতে যাওয়ায় শেষ ওয়ানডেতে খেলার দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন কোনো উত্তাপই ছিল না। দর্শক টানার জন্য এমন ম্যাচ আয়োজকদের মাথাব্যথার কারণ। কিন্তু আগের দিন মাশরাফি বিন মর্তুজা অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ায় ম্যাচটার মাহাত্ম্যই গেছে বদলে। সিলেটের মানুষরা তো আছেনই, অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচ দেখতে ঢাকা থেকেও ছুটে এসেছেন অনেকে। কিন্তু তারা কেউই অধিনায়ককে বিদায় বলতে রাজি নন। তাদের কাছে মাশরাফি যেন ভালোবাসার অন্য নাম, অধিনায়কত্ব থেকে সরে গেলেও যাকে ফিরে পাওয়া যাবে অন্যকোনো উপায়ে।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দুই ম্যাচে গ্যালারি ছিল অনেকটাই ফাঁকা। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায়, এদিন এমনিতেই বেশি দর্শক হওয়ার প্রত্যাশা ছিল। সেই সঙ্গে মাশরাফির উপলক্ষ যোগ হওয়ায় পুরো গ্যালারিতে বইছে অন্যরকম আবেগের স্রোত।

বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের ঠিক উপরে সবুজ টি-শার্টে, ‘মাশরাফি, তুমি দীর্ঘজীবী হও’ লিখে নিয়ে চিৎকার করছিলেন কয়েকজন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাশরাফি তাদের কাছে কেবল একজন খেলোয়াড় নন, নন শুধু একজন অধিনায়ক।

শামস রাশিদ জয় পুরো সিরিজই দেখেছেন গ্যালারিতে বসে। তার কাছে মাশরাফি সাহসের আরেক নাম, ‘রূপকার্থে যে বাংলাদেশ আমাদের পাওয়ার কথা, সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় মাশরাফি। সবাই যদি চেষ্টার শতভাগ করত, তাহলে আমরা যে বাংলাদেশ পেতাম, সেই বাংলাদেশের গল্পটা বলে মাশরাফি। মাশরাফি ছাড়া অন্য যে দুই ফরম্যাটে খেলে বাংলাদেশ, সেখানে কিন্তু ডমিনেট করতে পারে না। টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফি যতদিন ছিল, ভালো খেলেছে। সততা, একাগ্রতা, সংগ্রাম করা এইগুলো শিখিয়েছে মাশরাফি। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দেশটা তৈরি হয়েছে। শারীরিক কোনো অবস্থা তাকে অনুমতি দেয় না এই খেলা খেলতে। কিন্তু সবকিছুর বিপরীতে গিয়ে সে এই খেলা খেলে যায়। এই সাহস দেওয়া অনেক বড় কিছু।’

তারা তাই বিদায় নয়, জানাতে এসেছেন ভালোবাসা, ‘আমরা লিখে নিয়ে এসেছি, “মাশরাফি তুমি দীর্ঘজীবী হও।” আমরা মাশরাফিকে বিদায় জানাতে আসিনি। আমরা এটাও বলব না, মাশরাফি তুমি অনেক বছর খেলো। আমরা বলতে এসেছি, মাশরাফি তুমি ভালো থাকো, তোমার শরীর যেন ভালো থাকে। তুমি যে স্বপ্ন দেখিয়েছ, সেজন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।’

সুস্মিতা খান প্রথম দুই ম্যাচ দেখেননি। বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে এসেছেন মাশরাফিকে ভালোবাসা জানাতে। তার কাছে মাশরাফির অর্থ অন্য সবার চেয়ে আলাদা, ‘অনেকের কাছে মনে হতে পারে, মাশরাফি কেবল বোলার, অনেকের কাছে মাশরাফি কেবল অধিনায়ক, পারফর্ম না করলেও অধিনায়ক হিসেবে সে টিকে যাবে- এমন আলাপও অনেকে তোলে। আমার কাছে মাশরাফি হলো সেই মানুষটা, যে মানুষটা জানে। একটা রূপক অর্থে যদি বলি আমি, অনেকগুলো খড়কুটোর মতো মানুষ অনেকদিকে ছড়িয়ে আছে। মাশরাফি হলো সেই দড়িটা যে ওইটাকে একসঙ্গে বেধে রাখতে পারে। হাতের পাঁচটা আঙুল পাঁচ দিকে থাকে, কব্জিটা মুঠো করতে সাহায্য করে। মাশরাফি হলো সেই কব্জিটা।’

‘আজ ঢাকা থেকে এখানে আসার মূল কারণ এটাই ছিল। অধিনায়ক মাশরাফিকে বিদায় জানানো না, আমরা সবাই তাকে যারা ভালোবাসি, “ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন” বলি। তার প্রতি সম্মান জানানো। তার সঙ্গে একটা দিন, সারাটা দিন থাকা।’

সুস্মিতা মনে করেন, ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তুপ থেকে বারবার ফিরবেন মাশরাফি, ‘ধ্বংসস্তুপ থেকে যারা শুরু করতে পারে, এদেরকে বলে ফিনিক্স। মাশরাফি হলো ফিনিক্স, ও ফিরে আসবে, কোনো না কোনোভাবে ফিরে আসবে। দেশের একজন সেবক হিসেবে হোক। ওর তো আরেকটা ভূমিকা আছে। ও ফিরবে।’

ফয়সাল মাহমুদ নীল খেলা ছাড়ার পর মাশরাফিকে চান ক্রিকেট বোর্ডে, ‘আমাদের কাছে মাশরাফি মানেই লড়াকু। আমরা যেভাবে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দেখি, সেভাবে আমাদের বাংলাদেশের ক্রিকেটে, বাংলাদেশের স্পোর্টসে যে নামটা সবার আগে চলে আসে, সে নামটা মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফিকে অনন্য উচ্চতায় নেওয়ার অনেক কারণ আছে, তার পায়ে আটবারের মতো অপারেশন হয়েছে। এই অবস্থা নিয়ে সে জানে পরবর্তী জীবনে তাকে পঙ্গুত্ববরণ করতে হবে। এটা জেনেও সে খেলা ছাড়েনি। সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছে। মাশরাফিকে আজকের পরে আর অধিনায়কত্ব করতে দেখা যাবে না। মাশরাফির উদ্দেশে একটা জিনিসই বলব, মাশরাফি দীর্ঘজীবী হোক। মাশরাফি ক্রিকেট বোর্ডে আসুক, আমরা মাশরাফিকে চাই।’

মালিহা ইবনাত জানান, তাদের হৃদয়ে মাশরাফি একেবারেই অনন্য জায়গায় আছেন, ‘তার অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচ দেখতে আমরা সারারাত ভ্রমণ করে এসেছি ঢাকা থেকে। যদিও সে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবে, কিন্তু আমরা চাই সে থাকুক, মাঠে থাকুক। তাকে মাঠে দেখতেই আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সে আমাদের মনে সব সময় থাকবে। তার জায়গাটা কখনোই অন্য কেউ পূরণ করতে পারবে না।’

Mash

সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে খেলা দেখতে এসেছেন কবির য়াহমদ। তার মতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফি হলো একটি যুগের নাম, ‘মাশরাফি হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের আলাদা একটা ধারা, ভিন্ন একটি যুগের নাম। মাশরাফির আগের বাংলাদেশের ক্রিকেট ও মাশরাফির আসার পরের বাংলাদেশের ক্রিকেট পুরোপুরি ভিন্ন মাত্রায়। মাশরাফি থামলে তাই থেমে যাবে একটি যুগও।’

নব্বুইর দশক থেকে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখেন সিলেটের বিনয় ভদ্র। মাশরাফির অভিষেক ম্যাচটিও ঢাকায় মাঠে বসে দেখেছেন তিনি। তার কাছেও মাশরাফি মানে পুরো এক অধ্যায়, ‘মাশরাফির অভিষেক ম্যাচও আমি মাঠে বসে দেখেছি। অনেকগুলো মাইলফলকে আমি মাঠে ছিলাম। মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটি অধ্যায়।’ 

 

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka Battery-Powered Rickshaw Restrictions

Traffic police move against battery-run rickshaws on major roads

The move has brought some relief to commuters, as the high-speed rickshaws have been causing accidents.

1h ago