‘হাথুরুসিংহেকে আমি অবশ্যই প্রথমে রাখব’

ডেভ হোয়াটমোর, জেমি সিডন্স, শেন জার্গেনসন- খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক কোচের সঙ্গে কাজ করেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। অধিনায়ক হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। এই সময়েই বাংলাদেশ সাফল্যের ভেলায় ভেসেছে বেশি। যদিও এই কোচের সঙ্গে মাশরাফিসহ সিনিয়র খেলোয়াড়দের তেতো সম্পর্ক আড়ালে থাকেনি। গুঞ্জন আছে, মাশরাফির টি-টোয়েন্টি অবসরের পেছনেও হাথুরুসিংহের ইন্ধন আছে। তবে এতকিছুর পরও অধিনায়কত্বের বিদায় বেলায় তার পাওয়া সেরা কোচ হিসেবে এই লঙ্কানের নামই নিলেন মাশরাফি।
২০১৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝেই পদত্যাগ করেন তিনি। তার সময়ে ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান , দক্ষিণ আফ্রিকাকে পর পর তিন ওয়ানডে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। টেস্ট জিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
আইসিসি বিশ্ব আসর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ উঠে সেমিফাইনালে, খেলেছে এশিয়া কাপের ফাইনালেও। সবগুলো সাফল্যে দলকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি আর কোচের ভূমিকায় পরিকল্পনা সাজান হাথুরুসিংহে। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অধিনায়কের ইতি টানার দিনে সেরা কোচ বাছতে দ্বিধা করলেন না মাশরাফি, ‘বাংলাদেশের মতো একটা আন্তর্জাতিক দলের কোচ যারা ছিলেন, প্রত্যেক কোচেরই একটা সামর্থ্য ছিল। তারমধ্যেও একটা বিশেষত্ব থাকে। যদি বলেন সেদিক থেকে হাথুরুসিংহেকে আমি অবশ্যই প্রথমে রাখব। যদিও অনেকে মনে করতে পারে যে হাথুরুসিংহের কারণে আমার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে। আসলে তা না। এছাড়া আমি জেমি সিডন্সের কথা সব সময় বলে আসছি। আজকে সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদের তৈরি হওয়ার পেছনে সিডন্সের অনেক অবদান। এটা তো ওরাও বারবার বলে।’
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে টি-টোয়েন্টি থেকে আকস্মিক অবসরে যান মাশরাফি। গুঞ্জন চাউর হয় হাথুরুসিংহের চাপেই সরে যেতে হয় তখনও ছন্দে থাকা অধিনায়ককে। শুধু মাশরাফিই নন, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গেও সম্পর্ক তিক্ততায় নেমে আসে হাথুরুসিংহের।
শেষ দিকে তেতো হয়ে এলেও ট্যাকটিক্যাল দিক বিচারে মাশরাফি থাকলেন নির্মোহ, ‘হাথুরুসিংহের কথা এইজন্য বলব, কারণ হাথুরুসিংহে একটা ধাপে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে আসছে।’
মাশরাফি আশা করেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে চালানো হবে না কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা। বর্তমান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যেন ধারাবাহিকতা রেখে দলকে থিতু হতে দেন, ‘কাল (বৃহস্পতিবার) আপনাদের একটা কথা বলেছিলাম, এখন আমাদের পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় না। যে কোচ আসে যদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাহলে আমার মনে হয় এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভাল হবে না। যদি নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থাকে (অদল-বদলের) যেটা স্বাভাবিক।’
বাংলাদেশকে ৫০টি ম্যাচ জেতানো অধিনায়কের চাওয়া, পরীক্ষা নিরীক্ষার কারণে যেন পিছিয়ে দেওয়া না হয় দেশের ক্রিকেট, ‘হাথুরুসিংহে যে জায়গায় রেখে গেছে, সেখান থেকে আমরা কোন পর্যায়ে যাই। সেটা কিন্তু দেখার বিষয়। ২০১৯ পর্যন্ত একটা ধাপ ছিল। বিশ্বকাপ শেষ ম্যাচ জিতলে আমরা পাঁচে থাকতাম। না জেতায় আটে ছিলাম। একটা ম্যাচের জন্য বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা ধাপে আসছে। এখন ছয় মাস, এক বছর পরীক্ষার সময় না। এরপর নতুন আরেকজন এসে আবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ওই জায়গায় নাই।’
‘আমাদের ক্রিকেট বোর্ড আছে। তারা ভাববে বিষয়টা। কারণ দিনশেষে আমাদের খেলোয়াড়রাই এইগুলা বহন করবে। পরীক্ষা নিরীক্ষার কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন আটকে না যায়, পিছে না যায়।’
Comments