ইটভাটায় যাচ্ছে ফসলি জমির প্রাণ
ইট তৈরি করতে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কিনছে ভাটাগুলো। এতে কৃষি জমিগুলো উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করতে হচ্ছে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। তবু কৃষকের ঘরে উঠছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ফসল।
লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি বৈধ-অবৈধ ইটভাটা চলছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমি থেকে মাটি কিনতে নানা কৌলশ অবলম্বন করেন।
আদিতমারী উপজেলার বামনেরবাসা গ্রামের কৃষক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ (৬৫) বলেন, এক বিঘা জমির উপরের অংশের মাটি বিক্রি করলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। আমরা মাটি বিক্রি করতে চাই না, বাধ্য হয়েই বিক্রি করি। ইটভাটার মালিক কিছু জমি কিনে সেখান থেকে মাটি কেটে নিচু করে ফেলে। আমাদের জমিতে সেচের পানি ধরে রাখতে মাটি কেটে পাশের জমির সমান করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ইটভাটায় মাটির বিক্রি করি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিধুভূষণ রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মাটির উপরি অংশ থেকে ৬-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত বলা হয় মাটির প্রাণ। এই প্রাণের উর্বরতা শক্তিই প্রত্যাশিত ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে। ফসলি জমি থেকে ৪-৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হলে ওই মাটি ফসল উৎপাদনে অক্ষম হয়ে উঠে। জমির স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ বছর।
কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রামের কৃষক বদিয়ার রহমান (৬৩) বলেন, আমি ১০ বছর আগে আমার দুই বিঘা জমির উপরি অংশ ইটভাটা মালিকের কাছে বিক্রি করেছিলাম। এখনো জমির উর্বরতা ফিরে আসেনি। মাটি বিক্রি করে সাময়িক কিছু টাকা পেয়েছিলাম, কিন্তু দীর্ঘদিন হলো ফসল পাচ্ছি না। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও লাভ হচ্ছে না।
সদর উপজেলার সাপ্টানা গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান (৫৫) বলেন, ইটভাটার মালিক এক ফুট গভীর করে মাটি নেওয়ার চুক্তি করে। কিন্তু চার থেকে পাঁচ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়। প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। আমরা কৃষকরা ইটভাটা মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি।
এ প্রসঙ্গে হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম বেজগ্রামের ইটভাটার মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, আমরা কোনো কৃষককে মাটির উপরি অংশ বিক্রি করতে বাধ্য করি না। বরং কৃষকরা স্বেচ্ছায় মাটির উপরি অংশ বিক্রি করে। উর্বর জমির উপরি অংশে ইট তৈরি ভালো হয়, তাই আমরা মাটি কিনি।
Comments