বাঁচা হলো না পূর্ণিমার

বখাটেদের অত্যাচার আর বাবার দারিদ্র্রের কারণে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সুইটি আক্তার পূর্ণিমাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বাবা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট এলাকার নবম শ্রেণির এই ছাত্রীর।
সুইটি আক্তার পূর্ণিমা। ছবি: সংগৃহীত

বখাটেদের অত্যাচার আর বাবার দারিদ্র্রের কারণে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সুইটি আক্তার পূর্ণিমাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বাবা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট এলাকার নবম শ্রেণির এই ছাত্রীর।

বিয়ের পর গত শুক্রবার পদ্মা নদীর ওপারে চরখানপুরে স্বামীর বাড়িতে বৌভাত শেষে বাবার বাড়ি ফেরার পথে নৌকাডুবির ঘটনায় নিঁখোজ হয় পূর্ণিমা। চার দিন পর গতকাল সোমবার সকালে রাজশাহীর সাহাপুর ঘাট এলাকা থেকে তার দেহ উদ্ধার করা হয়।

দাদী জাহানারা বেগম জানান, পূর্ণিমার হাতের মেহেদীর রঙও মুছেনি। গয়না, বিয়ের শাড়ি পরণেই ছিল। শুধু প্রাণ ছিল না।

তিনি বলেন, ‘স্কুলে যাওয়া আসার পথে বখাটেরা বিরক্ত করত, বাড়িতে ঢিল পড়ত, সকালে উঠে দেখা যেত রান্নার চুলার মধ্যে পানি। রাতে ঘুমিয়ে থাকলে কড়া নেড়ে কে বা কারা পালিয়ে যেত। এসব কারণেই কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পছন্দসই পাত্রও পাওয়া গিয়েছিল।’

পূর্ণিমার বাবা মো. শাহীন দিনমজুর। মেয়ের লেখাপড়ার খরচও কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না।

বিয়ের অনুষ্ঠান হয় বৃহস্পতিবার। পরদিনই ঘটে নৌকাডুবির ঘটনা।

প্রাণপন বাঁচার চেষ্টা করেছিল পূর্ণিমা। তার স্বামী আসাদুজ্জামান রুমন বলেন, ‘ডুবে যাবার আগে অন্তত দুবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচানোর জন্য বলেছিল। কিন্তু যখনই আমাকে ধরছিল আমি ডুবে যাচ্ছিলাম।

পরে যখন উদ্ধারের জন্য বালিবাহী নৌকাটি এল, তখন আর তাকে খুঁজে পাইনি।’

জাহানারা জানান, চাচী মনি বেগমকে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেছিল পূর্ণিমা। মনি বলেছিলেন, আমার ছেলেকে নৌকায় তুলে দিয়ে তোমাকে তুলছি। মনি কোনোমতে তার ১২ বছরের ছেলেকে নৌকায় তুলেই তলিয়ে যান।

পূর্ণিমা তার বাবা মো শাহীনের কাছেও আকুতি জানিয়েছিলেন। শাহীন তখন তার আরেক মেয়ে ছয় বছরের রাখিকে নৌকায় তুলে দিচ্ছিলেন। পরে পূর্ণিমার দিকে যেতে গিয়ে ডুবতে থাকা নৌকার ইঞ্জিনে আঘাত পান শাহীন। এতে তার পা ভেঙ্গে যায়। পানির তোড়ে ভেসে যায় পূর্ণিমা।

নৌকাডুবির এই ঘটনায় মারা গেছেন নয় জন। জীবিত উদ্ধার হলেও তার বাবা মো. শাহীন এখন হাসপাতালে। এর আগে পূর্ণিমার চাচা মো শামীম, শাামীমের স্ত্রী মনি বেগম, তাদের মেয়ে রোশনি, পূর্ণিমার দুলাভাই রতন আলী, তার মেয়ে মরিয়ম, পূর্ণিমার খালা আঁখি খাতুন, ভাগ্নি রুবাইয়া খাতুন, ও খালাতো ভাই এখলাস উদ্দিনের দেহ উদ্ধার হয়।

পূর্ণিমার দেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নৌকাডুবিতে নিঁখোজদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম। 

রাজশাহীর জেলা প্রসাশকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতদের পরিবারকে ২০,০০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

9h ago