চা-শ্রমিকদের ছন্দহীন জীবনে ফাগুয়ার ছোঁয়া
সংগ্রামী জীবন চা-শ্রমিকদের। ঘরে-বাইরে শত অভাব-অনটন। তবে বছরের কয়েকটা সময়ে তারা এসব ভুলে যান। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে মেতে ওঠেন উৎসবে। এ রকম উপলক্ষগুলোর একটি হোলি উৎসব। চা-বাগানে হোলি ফাগুয়া উৎসব নামে বেশি পরিচিত।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ফাগুয়া উৎসবের হাওয়া বইছে সিলেটের ১৬৪টি চা বাগানে। একে অন্যের মুখে বাম হাতে লাল, কালো, নীল রঙ লাগিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে চলছে ফাগুয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়। উপজেলার ফুলছড়া, লাখাই, কালীঘাট, রাজঘাটসহ বিভিন্ন চা-বাগান ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।
এলাকাবাসী জানায়, চা-বাগানের বৃহত্তম উৎসব ফাগুয়া। যাদের মুখে রঙ দেওয়া হয়নি, তাদের রাঙিয়ে তুলতেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ অন্যদের। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নেচে, গেয়ে আনন্দ করছে। রয়েছে চা-বাগানের ঐতিহ্যবাহী লাঠিনৃত্য। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও ফাগুয়া উৎসবের তিন দিন চা জনগোষ্ঠীর লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করেন।
ফাগুয়া উৎসবকে আরও আনন্দঘন করে তুলতে চা বাগানগুলোতে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে উৎসব ভাতা।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, চা-শ্রমিকদের বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে হোলি অন্যতম। সর্বজনীনভাবে একে দোল উৎসব বা হোলি বলা হলেও চা-বাগানে ফাগুয়া উৎসব নামে অধিক পরিচিত। চা-শ্রমিকদের সংগ্রামী জীবনে প্রতিবছর ফাগুয়া উৎসব আনন্দের জোয়ার নিয়ে আসে। ফাগুয়া শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ আগে স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েরা বাপের বাড়ি নাইওরে যান। ঘরে ঘরে ভালো রান্না হয়, আনন্দ হয়। চা-শ্রমিকেরা সারা বছর বিভিন্ন সমস্যায় থাকলেও উৎসবের দিনগুলোতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু ভালো থাকার চেষ্টা করেন। শুরু থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত উৎসবের রেশ থাকে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ফাগুয়া উৎসব ২০২০ আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরপদারের সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। সভাপতিত্ব করেন উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জি। উৎসবের কর্মসূচি ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ও কালীঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাতগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন শীল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন কবি ও সাংবাদিক আকমল হোসেন নিপু। তিনি বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব যেন হারিয়ে না যায়, সে দিকে চা শ্রমিকনেতাদের উদ্যোগী হওয়া উচিত।’
জহর তরপদার বলেন, ফাগুয়া উৎসবে বাগানে বাগানে চলবে লাঠিনৃত্য, রঙ খেলা, হোলি কীর্তন, ঝুমুর নৃত্য। ফাগুয়া উৎসব উপলক্ষে আগামী ১৩ মার্চ শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা-বাগান মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চা-বাগানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির আলোকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে।
Comments