টাকায় করোনা ঝুঁকি, উদ্যোগ নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের

কাগজের নোট হাতবদলের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকগুলো দেশে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ৬ মার্চ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাংক নোট কোয়ারেন্টাইন করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কিছু ব্যাংক নোট পুড়িয়েও ফেলা হয়।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে উহান থেকে কাগুজে নোট আর ধাতব মুদ্রা তুলে নেয় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অতিবেগুনী রশ্মি এবং উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করে নোটগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয়। অঞ্চলভেদে ভাইরাস প্রকোপ বুঝে সাত থেকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রেখে আবার নোটগুলো বাজারে ছেড়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে একই পন্থা নিয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন জন শনাক্ত হলেও  কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা জীবাণুমুক্ত করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নগদ টাকার মাধ্যমেই অধিকাংশ আর্থিক লেনদেন হয় বাংলাদেশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫ দশমিক ৫২ কোটি টাকার কাগুজে নোট বাজারে ছেড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ কাগুজে নোট অন্যান্য দেশের নোটের তুলনায় ময়লা ও অপরিষ্কার।

নগদ অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ জীবাণুর বিস্তার নিয়ে ২০১৭ সালে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয়। নিউইয়র্ক শহরের কাগুজে নোট নিয়ে করা ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, মলমূত্রের ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে ফ্লু জাতীয় ভাইরাস পর্যন্ত মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে যেতে পারে এভাবে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৫ জন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দ্য ডেইলি স্টার। তাদের মধ্যে ১৩ জনই ব্যাংক নোটের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে বাজার থেকে নোংরা ও ব্যবহার অযোগ্য নোট সরিয়ে নেয়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ব্যাংক নোট কোয়ারেন্টাইন করে রাখার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।’

গত ২ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছে। স্পর্শবিহীন লেনদেন বা প্রযুক্তি বলতে, ব্যাংক নোট ছাড়া অন্য মাধ্যম যেমন এটিএম কার্ড, বিভিন্ন পেমেন্ট অ্যাপ অথবা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের কথা বোঝানো হয়েছে।

কাগুজে নোটে কয়েকদিন পর্যন্ত ভাইরাস টিকে থাকতে পারার আশঙ্কা প্রকাশ করে নগদ লেনদেনের পর হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশে নগদ অর্থ ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে লেনদেনের পরিমাণ বেশ কম। জাতিসংঘের সংস্থা ‘বেটার দেন ক্যাশ অ্যালায়েন্স’ এর একটি জরিপ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট লেনদেনের মাত্র ছয় শতাংশ ডিজিটাল মাধ্যমে হয়ে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উন্নত দেশে নগদ লেনদেনের চাইতে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন অনেক বেশি হয়। তাই সেসব দেশে ব্যাংক নোট কোয়ারেন্টাইন করা সহজ। বাংলাদেশের মতো দেশে এটা বেশ কঠিন।’

ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে সেটি বাস্তবায়নে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

বেটার দেন ক্যাশ অ্যালায়েন্স এর গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পাই স্ট্র্যাটেজির ব্যবস্থাপনা সহযোগী পিয়াল ইসলাম। তিনি জানান, ২০১৯ সালে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের পরিমাণ ১৮ শতাংশ বাড়লেও লেনদেনের সংখ্যা তেমনটা বাড়েনি।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মতো মারাত্মক ফ্লু-জাতীয় ভাইরাস মোকাবেলা করতে হলে সবারই সংস্পর্শ এড়িয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনে আগ্রহী হওয়া উচিত।’

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস-এমএফএস) উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

গত বছর পাই স্ট্র্যাটেজির এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট এমএফএস লেনদেনের ৬ শতাংশ কেনাকাটায়, ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, ৮০ শতাংশেরও বেশি লেনদেন হয়েছে সরাসরি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, নোট হাতবদলের মাধ্যমে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ দশমিক ৮২ কোটি টাকা ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে।

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, নগদ অর্থ লেনদেন কমাতে ব্যাংকগুলোর উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।তিনি বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। মহামারি পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

10h ago