‘বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে’ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চায় ভারত

rohingya_camp-1_2.jpg
কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের দৃশ্য। এএফপি ফাইল ছবি

ভারত বলছে তারা ‘বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে’ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশটি তাদের দিক থেকে কোনো ধরনের অসহযোগিতার ধারণাও খারিজ করে দিয়েছে।

নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপকালে ভারতীয় পক্ষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের ব্যাখ্যা দেয়। পাশাপাশি জানায় যে, এ সংকটের সমাধান পাওয়ার কোনো প্রক্রিয়াতে তারা বাধার সৃষ্টি করছে না।

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে নেই এটা সত্য নয়। এ বিষয়ে কাজগুলো নিরাপদ, সুরক্ষিত ও টেকসই পদ্ধতিতে করা দরকার’, বলেন এক কর্মকর্তা।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) সিনিয়র ফেলো ড. জয়িতা ভট্টাচার্য বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে রোহিঙ্গা সংকটের প্রয়োজন স্থায়ী ও টেকসই সমাধান।

তবে তার মতে, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতাকে মানতে হবে এবং আরও অনেক কিছু করতে হবে। ‘প্রচেষ্টা আছে কিন্তু সেগুলো এখনও যথেষ্ট নয়।’

জয়িতা উল্লেখ করেন যে, মিয়ানমারের সঙ্গে বড় ধরনের সীমান্ত থাকায় ভারত রাখাইন রাজ্যেও কাজ করছে।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন, ভারত, রাশিয়া, এমনকি জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে না থাকায় এ ইস্যুটি সরকারের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে।’

তবে জয়িতা বলেন, ‘ভারতের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার এবং রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান পাওয়ার জন্য সব সময় প্রচেষ্টা চলছে।’

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক সংকট এবং বাংলাদেশে তার প্রভাব বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে প্রায়ই আগ্রহ দেখানো হয় এবং মাঝে মধ্যে “বেঠিক জল্পনা” করা হয়।’

ভারত বলছে, যে মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে তা গভীরভাবে প্রশংসাযোগ্য। ‘এবং আপনারা যে অনেক বড় বোঝা বইছেন তা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি এবং সহানুভূতি পোষণ করি।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে শ্রিংলা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ের প্রকৃত প্রতিবেশী হওয়া একমাত্র দেশ হিসেবে ভারত পরস্পরের কাছে গ্রহণযোগ্য যেকোনো সমাধানে পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যে সমাধান বাস্তুচ্যুত মানুষদের রাখাইন রাজ্যে তাদের বাড়িতে যত দ্রুত সম্ভব ফেরার এবং সম্মানজনক জীবনের ব্যবস্থা করবে।

তিনি বলেন, ‘ফেরার বিষয়টি এমনভাবে করতে হবে যাতে তা নিরাপদ, সুরক্ষিত ও স্থায়ী হয়।’

বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে পাঁচ কিস্তিতে সাহায্য দিয়েছে ভারত এবং তারা আরও দিতে প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি দেশটি রাখাইন রাজ্যে গৃহায়ণসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব।

ভারত এটা স্পষ্ট করেছে যে, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সর্বস্তরে সহযোগিতার বিষয়ে তারা অবিচল রয়েছে। তাদের চাওয়া হলো অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জন্য বানানো আইডিপি শিবিরগুলো বন্ধ করা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের সুযোগ সৃষ্টি এবং বাস্তুচ্যুত লোকজন যাতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে আগ্রহী হয় সে জন্য অনুকূল পরিবেশ দেওয়া।

শ্রিংলার মতে, বৃহৎ এ মানবিক সমস্যা সমাধানের পথে আসলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

‘এ বিষয়ে আমাদের মত হলো যে, আমরা বিভিন্ন অংশীজনদের বাগাড়ম্বর কমাতে এবং প্রায়োগিক ও বাস্তববাদী সমাধান সন্ধান করতে বলছি। আর এতে মনে রাখতে হবে যে অগ্রাধিকার হলো একটি ন্যায্য ও সম্মানজনক মানবিক ফলাফল পাওয়া’, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। তাদের বেশির ভাগই রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

Comments

The Daily Star  | English
election before ramadan 2026 in Bangladesh

Election could be in February, Yunus indicates

He said it will be possible if preparations completed, sufficient progress made in reforms and judicial matters

7h ago