মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদী এখন ধু ধু বালুচর
এক সময়ের প্রমত্তা কালীগঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া প্রায় পুরোটা সময় থাকে পানিশূন্য। যতদূর চোখ যায়— নদীর বুকজুড়ে ধু ধু বালুচর। কোথাও চাষাবাদ হচ্ছে, কোথাও গরু চড়ে বেড়াচ্ছে কিংবা দুরন্ত শিশুরা খেলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, মানিকগঞ্জের বুক চিরে বয়ে গেছে পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতীসহ মোট ১১টি নদী। জেলার মোট আয়তন ১ হাজার ৩৭৯ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ২৪১ কিলোমিটার নদী এলাকা। কালীগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৭৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৪২ মিটার। এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান।
দৌলতপুরের চর কাটারি এলাকায় যমুনার শাখা থেকে কালীগঙ্গা ঘিওর হয়ে আশাপুরের পাশ দিয়ে জাবরা, দূর্গাপুর ও তরা এলাকায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। এখান থেকে গালিন্দা, নবগ্রাম, চরঘোসতা, আলগির চর, শিমুলিয়ায় এসে পদ্মার সঙ্গে মিশেছে। এখান থেকে আরও খানিকটা এগিয়ে হাতিপাড়া, বালুখন্দ, পাতিলঝাপ, শল্লা হয়ে আলী নগরে এসে ধলেশ্বরীতে মিশেছে। সত্তরের দশকেও কালীগঙ্গা হয়ে বড় বড় লঞ্চ-স্টিমার চলতো।
সুফিয়া বেগমের বয়স এখন ৮০ বছর। উত্তর তরা গ্রামে নদীর উত্তর পাড়ে তার বাড়ি। সুফিয়া বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২০ বছর আগেও এত খারাপ অবস্থা ছিল না। এই নদী এক সময় বাড়ির পাশে ছিল। মাছ ধরতাম, গোসল করতাম। গৃহস্থালি কাজ, কৃষি কাজ নদীর পানি দিয়েই করা হতো। এখন আর নদীতে পানি নেই। বেশিরভাগ জায়গা ভরাট হয়ে গেছে, দখল হয়ে গেছে।’
একই গ্রামে বাড়ি আব্দুল মজিদের। ৬৫ বছর বয়সী মজিদ কৃষি কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষি কাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
আরেক কৃষক মগর আলী বলেন, ‘এক সময় নদীর পানি রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেত। এখন বর্ষা মৌসুম ছাড়া নদীতে পানিই থাকে না। সেই পানিও শিল্প-কারখানার বর্জ্যে দূষিত হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উজানের পলিতে নদীটি ভরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আগে নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া হতো। পানির সংকটে কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এখন ভূগর্ভস্থ পানিই একমাত্র ভরসা।’
মানিকগঞ্জ সদর ও ঘিওর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সদরের বেউথা, বান্দুটিয়া, পৌলী ও ঘিওর উপজেলার তরা, উত্তর তরা, জাবরা এলাকাসহ অন্তত ৫০টি এলাকায় চর পড়েছে। পানির প্রবাহ না থাকায় এই অবস্থা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ঘিওর উপজেলার দক্ষিণ তরা এলাকার রমজান আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘নদীর উত্তর পাড়ে তরা ও বেউথা ব্রিজ এলাকায় অবৈধভাবে নদী দখল করে ভরাট করেছে ব্যবসায়ীরা। দুই পাড়েই নদীর ওপর গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। এতে নদীর প্রায় অর্ধেকটাই ভরাট হয়ে গেছে।’
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কালীগঙ্গা নদী ছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ অন্যান্য নদগুলোর খনন কাজ চলছে। পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নদীগুলো খননের পরিকল্পনা আছে।’
Comments