প্রতিদিন ঢাকা শহরের গাছে ধুলা জমে ৪৩৬ মেট্রিক টন

ঢাকার পথে চলার সময় আপনার চোখ যদি কোনো গাছে আটকায় তাহলে মনে হতেই পারে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। গাছে ঝুলতে থাকা বাদামি পাতাগুলো আপনাকে এমন চিন্তা করতে বাধ্য করবে। মনে হবে পাতাগুলো মরা।
roadside vegetation
ঢাকা শহরে রাস্তার পাশে গাছের ওপর ধুলার আবরণ। ছবি: আনিসুর রহমান

ঢাকার পথে চলার সময় আপনার চোখ যদি কোনো গাছে আটকায় তাহলে মনে হতেই পারে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। গাছে ঝুলতে থাকা বাদামি পাতাগুলো আপনাকে এমন চিন্তা করতে বাধ্য করবে। মনে হবে পাতাগুলো মরা।

আসলে এই গাছ বা পাতা মরা না। পাতার বাদামি রঙ তার নিজস্ব নয়। এই রঙয়ের আবরণের নিচে তার নিজস্ব সবুজ রঙটি ঢাকা পরে গেছে। রাস্তার ধুলা উড়ে এসে জমতে জমতে এই পাতাগুলোকে করে তুলেছে বিবর্ণ। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু কেমন হতে পারে।

প্রতিদিন ঢাকা শহরের গাছগুলোতে ৪৩৬ মেট্রিক টন ধুলা জমে। প্রতিদিন!

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেয়ারিক পল্যুশন স্টাডিজ (সিএপিএস) পরিচালিত ‘ঢাকা শহরে গাছের পাতায় ধূলিকণা জমার সামগ্রিক মূল্যায়ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা হয়েছে। গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয় গুলিস্তান পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনকে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ঢাকায় ৯৬ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে গাছ ছিল।

রাস্তা থেকে ১০০ মিটার ভেতরে মোট ৭৭ প্রজাতির গাছ থেকে ধুলার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ৯ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নমুনাগুলো সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে ফিল্টারিং ও গ্র্যাভিমেট্রিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা হয়।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, গুলিস্তান পার্কে গাছের গায়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ধুলা জমেছে। সবচেয়ে কম বোটানিক্যাল গার্ডেনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টায় পাতার প্রতি বর্গ মিলিমিটারে ধুলা জমার পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৫৯ মাইক্রোগ্রাম ও ২৪ ঘণ্টায় এই পরিমাণ ৪ দশমিক ৫৩ মাইক্রোগ্রাম।

সে হিসেবে আনুমানিক ৯৬ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা গাছে ৭২ ঘণ্টায় এক হাজার ৩১০ মেট্রিক টন ধুলা জমে। অর্থাৎ, প্রতিদিন ঢাকার গাছগুলোতে জমে ৪৩৬ দশমিক ৭ টন ধুলা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত গাছ দূষণের ঝুঁকির বিরুদ্ধে লড়াই করে, তবে ঢাকার গাছগুলোই আছে ঝুঁকির মধ্যে। তারা আরও বলেছেন যে গাছগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে শহরের যানবাহন ও ধুলাবালির কারণে।

যোগাযোগ করা হলে সিএপিএসের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যে জায়গাগুলোতে যানবাহনের চলাচল বেশি সেখানকার গাছের পাতায় ধুলাও জমে বেশি।’

তিনি বলেন, ‘রাতে যানবাহনগুলো বেশি গতিতে চলে। এই গতির কারণে অনেকটা জায়গা জুড়ে ধুলা ছড়িয়ে যায় এবং তা গাছের পাতায় জমে। তাছাড়াও অপরিকল্পিত ও অসংরক্ষিত রাস্তা খনন ধুলা ছড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ।’

গত বছরের ১২ অক্টোবর স্প্রিংগার নেচার অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ ২০১৭ ও ২০১৮ সালের মার্চ থেকে মে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ঢাকার তিনটি পৃথক এলাকায় দেবদারু, মেহগনি ও কাঁঠাল গাছের উপর যৌথভাবে একটি গবেষণা চালিয়েছিল। ফার্মগেট, গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের রাস্তা থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা দলের প্রধান আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঢাকায় গাছের সংখ্যা কম। তার ওপর এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে যেকটি গাছ আছে তারও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। যেখানে বায়ু দূষণ বেশি, সেখানকার গাছগুলো বেশি ঝুঁকিতে আছে। দূষিত এলাকাগুলোতে কোনো গাছ আমি দেখিনি যেগুলো ভালো অবস্থায় আছে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন ও গাছের জীবন বাঁচাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago