তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

আমরা কি উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকব?

এখন পর্যন্ত পাওয়া গেল, চার প্রবাসী তাদের পরিবারের আরও চারজনের মধ্য করোনা ছড়িয়েছেন! রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো আট জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা আজ জানালেন— আট জনের মধ্যে পাঁচ জন হাসপাতালে আছেন। আর তিনজন ভালো হয়ে গেছেন।
রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পের কোয়ারেন্টিনে রাখায় বিক্ষোভ করছেন প্রবাসীরা। ছবি: স্টার

এখন পর্যন্ত পাওয়া গেল, চার প্রবাসী তাদের পরিবারের আরও চারজনের মধ্য করোনা ছড়িয়েছেন! রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো আট জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা আজ জানালেন— আট জনের মধ্যে পাঁচ জন হাসপাতালে আছেন। আর তিনজন ভালো হয়ে গেছেন।

আমাদের জানা মতে, রোগীর সংখ্যা দুজন থেকে চার জন। চার জন থেকে আট জনে পৌঁছেছে। আমরা জানি না এমন রোগীও কি আছে?

বিদেশ থেকে ভাইরাস বহন করে এনে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে প্রবাসীরা দেশে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছেন।

দেখা যাচ্ছে— প্রবাসীরা নিজের পরিবারের মধ্যেই রোগ ছড়াচ্ছেন। কোয়ারেন্টিনের নামে বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। ভাইরাস ছড়িয়েছেন। একজনের পরিবারের এক নারী ও দুই শিশু (ধরে নিচ্ছি বউ-বাচ্চা। কারণ, প্রবাসীর সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক সেটা প্রকাশ করা হয়নি।) সংক্রমিত হয়েছে।

কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে সংক্রমণের পর আক্রান্ত নারী ও বাচ্চারা কতদিন ধরে বাইরের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছে? বাচ্চারা কি সংক্রমণের পর স্কুলে গিয়েছিল? কিংবা তাদের প্রতিবেশী বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা? তারপর সেইসব প্রতিবেশী বাচ্চারা কি বাড়ি ফিরে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রোগ ছড়িয়েছে? ওই দুটি বাচ্চার বয়স ১০ বছরের কম। তাদের সঙ্গে কথা বলেও তারা কী কী করেছে, আর কার সঙ্গে মিশেছে, এর কতটুকু জানা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এরপর আসা যাক আক্রান্ত নারীর কথায়। তিনি না জেনে কতজনকে সংক্রমিত করেছেন কে জানে! উনি কি পাড়ার ভাবিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে গিয়েছিলেন? বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুলে গিয়েছিলেন? স্কুলের বাচ্চাদের মায়েদের সঙ্গে বসে গল্পগুজব করেছেন? রিকশাওয়ালাকে সংক্রমিত টাকা দিয়ে ভাড়া মিটিয়েছেন?

এসব পুঙ্খানুপুঙ্খ আমরা জানতে পারব না। বড়জোর আশা করতে পারি যে তিনি বার বার ভালো করে সাবান দিয়ে ৪০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়েছেন!

আর তা যদি না হয়, তাহলে কী হবে কে জানে! অপেক্ষা করা ছাড়া আর কী করার আছে!

এক পত্রিকার রিপোর্ট, গত কয়েকদিনে অন্তত ৯৪ হাজার প্রবাসী করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে দেশে এসেছেন। আর সরকার বলছে, ২ হাজার ৩১৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছে। তো যারা কোয়ারেন্টিনে আছেন, তারা যে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছেন না সে তো দেখাই যাচ্ছে।

কিন্তু, এরপরেও কথা থেকে যায়।

অনেকদিন পর বিদেশ থেকে আসার পর আক্রান্ত প্রবাসীর বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজন কি দেখা করতে এসেছিলেন? কিংবা তিনি কি পাড়ার দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন? অনেকদিন পর দেশে এসে কাঁচাবাজারে গিয়েছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর নেই। প্রশাসন কি এসব খোঁজার চেষ্টা করছে? আসলে কতজনের মধ্যে তারা রোগ ছড়িয়ে দিলেন বা আদৌ দিলেন কি না, সেটা কি প্রশাসন জানার চেষ্টা করবে?

মৌলভীবাজারে কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন যখন দুই দিন আগে বিয়ে করে ফেললেন, তখনই বোঝা যায়— কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তেমন কিছুই করছে না প্রশাসন।

অন্যরা অনেকে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন। ‘মানিকগঞ্জে প্রবাসীরা ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছেন’ এ নিয়ে সংবাদ হওয়ার পর একজনকে জরিমানা করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।

এটাতো গেল যাদের মধ্যে এখনো করোনার লক্ষণ নেই তাদের কথা। আর যারা সুস্পষ্ট লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন রোগীও তো দেখা যাচ্ছে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন।

গতকালই সন্দেহভাজন এক করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন।

সকাল ৮টার দিকে গায়ে জ্বর নিয়ে ৪০ বছর বয়সী বাহরাইন ফেরত ওই রোগী হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা দেখে করোনাভাইরাস সন্দেহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর এ যোগাযোগ করা হয়।

দুপুরে আইইডিসিআর’র দল স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গেলে মেডিসিন ওয়ার্ডে তাকে ও তার স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বোঝাই যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেমন দায়িত্ব পালন করছে আর কতটুকু প্রস্তুত! রোগী চিকিৎসা নিতে এসে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেলে তো দু’দিন আগে কানাডা ফেরত মেয়েটিকে ডাক্তার-নার্স চিকিৎসা না দিয়ে মেরেই ফেললো!

চীন, কোরিয়া, ইতালি, ইরানে কীভাবে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের এত এত সতর্কতা কোনো কাজেই আসছে না। গোটা উহান শহরের রাস্তাঘাট এখনো প্রতিদিন দুইবেলা সাবান গোলা জল দিয়ে ধুয়েও শুদ্ধ করা যাচ্ছে না।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। পরে তা চীনসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার। করোনাভাইরাস যদি এই ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে ছড়ানো শুরু করে, তাহলে কী ভয়াবহ অবস্থা হবে! সেটা প্রশাসন বোঝার চেষ্টা করছে?

আমরা কি কিছু শিখবো না বলে ঠিক করেছি?

গতকালই শিক্ষামন্ত্রী বললেন, স্কুল বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় নাই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সোচ্চার বেশ কয়েকদিন ধরে। পরদিনই (আজ) তিনি স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিলেন! বললেন, বাচ্চারা যেন কোচিংয়েও না যায়। একদিনে তার কী এমন বোধোদয় হলো যে স্কুল বন্ধ করে দিলেন। মানুষ তো সেটাও বুঝতে চায়।

আমাদের মনে এ রকম হাজারো প্রশ্ন আছে। কিন্তু, জবাব আমরা পাচ্ছি না। আমরা কি জবাব খোঁজার চেষ্টা করবো, নাকি উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে দেশে করোনা নাই বলে সুখ অনুভব করবো!

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now