বাংলাদেশের নাম রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু

bangabandhu sheikh mujibur rahman
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়। দক্ষিণ এশিয়ার এই অংশটিকে ঐতিহাসিকভাবে ‘বঙ্গ’ নামে ডাকা হলেও রাজনৈতিকভাবে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি এসেছে দেশ স্বাধীনের প্রারম্ভিককালে।

‘বাংলাদেশ’ নামটি কীভাবে এলো সে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘১৯৩০ এর দশকে “বাংলাদেশ” শব্দটি সাহিত্যে প্রথম ব্যবহার করেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। রাজনৈতিকভাবে এর ব্যবহারের একটি ইতিহাস আছে। ১৯৫৫ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তানের সংবিধান সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ববঙ্গকে “পূর্ব পাকিস্তান” বলার সরকারি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।’

‘বিরোধিতা করে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, বঙ্গ নামের একটি ইতিহাস আছে। ঐতিহ্য আছে। আর যদি এর নাম বদলাতেই হয় তাহলে জনমত যাচাই করা দরকার। পাকিস্তান সরকার তা শুনেনি।’

‘বঙ্গবন্ধু ১৯৬১ সালে “পূর্ববঙ্গ মুক্তি ফ্রন্ট” সংগঠন তৈরি করে, নিজের টাকায় লিফলেট ছাপিয়ে সাইকেলে চড়ে সেগুলো তিনি বিলি করেছেন। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্যে তিনি আন্তরিক ছিলেন।’

‘তারপর ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার মুখে উচ্চারিত স্লোগানের একটি ছিল— “বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।” আমরা তখন ছাত্র হিসেবে এই স্লোগান দিয়েছি।’

‘বাংলাদেশ শব্দটির সর্বসম্মুখে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করলো তরুণ প্রজন্ম। তরুণদের প্রস্তাবিত নামটি ঐতিহাসিক বৈধতা পেল ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর। সেদিন ছিল গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী। তিননেতার মাজারে আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি যে এই প্রদেশটির নাম হইবে বাংলাদেশ’। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে তার এই ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম।’

‘এরপর সরকারি কাগজপত্রে “পূর্ব পাকিস্তান” লেখা হলেও সেসময় আমরা তরুণরা মুখে “বাংলাদেশ” বলতাম। ৬ ডিসেম্বর পত্রিকায় দেখলাম, মওলানা ভাসানী এবং (সাবেক মুখ্যমন্ত্রী) আতাউর রহমান খান এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। এর মানে, আমরা রাজনৈতিক বৈধতা পেয়ে গেলাম।’

‘আমাদের প্রথম সরকার— “মুজিবনগর সরকার” গঠিত হয়েছিল “বাংলাদেশ” নামে। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ নামটি সাংবিধানিক হয়ে যায়।’

সেদিনের স্মৃতি

‘আমি তখন এমএ’র ছাত্র। আমরা জানতাম ৫ ডিসেম্বর বিকালে আলোচনা সভা হবে। আমরা শুনেছি সভায় বঙ্গবন্ধু আসবেন। তখন তিনি “বঙ্গবন্ধু” উপাধি পেয়েছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে রেসকোর্স ময়দানে তাকে “বঙ্গবন্ধু” অভিধা দেওয়া হয়েছে। যখনই বঙ্গবন্ধু কোথাও বক্তৃতা করবেন তা জানার পর আমরা উন্মুখ হয়ে থাকতাম তার বক্তৃতা শোনার জন্যে। সেদিনের সভায় এমন একটা চমকপ্রদ ঘোষণা আসবে তা আমরা ভাবতেও পারিনি।’

‘সত্যি কথা বলতে কী, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের পরেই তরুণ প্রজন্ম আর পূর্ব পাকিস্তান বলেনি। তাই বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে “বাংলাদেশ” নামকরণের ঘোষণা আসা আমাদের কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল। আমরা সেদিন উল্লসিত হয়েছিলাম। করতালি দিয়ে একে স্বাগত জানিয়েছিলাম।’

Comments

The Daily Star  | English

Nusraat Faria's arrest sends the wrong signal

The incident has been especially jarring even in this current environment where arbitrary murder cases have been filed against hundreds of individuals

1h ago