দুঃসহ অভিজ্ঞতা জানাতে বেঁচে আছেন আরিফুল

বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা আরিফুল ইসলামের জামিন নাকচ হলে, আমরা হয়তো জানতেই পারতাম না, একজনকে তুলে নেওয়া, নির্দয়ভাবে নির্যাতন আর ‘ক্রসফায়ার’ এর হুমকি কতটা ভয়ংকর হতে পারে। কেননা এরকম তো কতজনকেই তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটে। যাদের কেবল মরদেহ পাওয়া যায়, আর মৃত্যুর কারণ জানতে পারি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কিংবা নিরাপত্তা হেফাজতে অসুস্থতা। সুখের কথা, বিধিবহির্ভূত গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের সেই অভিজ্ঞতা জানাতে, আরিফুল বেঁচে আছেন।

বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা আরিফুল ইসলামের জামিন নাকচ হলে, আমরা হয়তো জানতেই পারতাম না, একজনকে তুলে নেওয়া, নির্দয়ভাবে নির্যাতন আর ‘ক্রসফায়ার’ এর হুমকি কতটা ভয়ংকর হতে পারে। কেননা এরকম তো কতজনকেই তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটে। যাদের কেবল মরদেহ পাওয়া যায়, আর মৃত্যুর কারণ জানতে পারি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কিংবা নিরাপত্তা হেফাজতে অসুস্থতা। সুখের কথা, বিধিবহির্ভূত গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের সেই অভিজ্ঞতা জানাতে, আরিফুল বেঁচে আছেন।

প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং দুজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে নিয়ে দরজা ভেঙে আরিফুলের বাড়িতে ঢোকেন, নির্বিচারে পেটান, চোখ বেঁধে টেনেহিচরে গাড়িতে তোলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাদক রাখার দায়ে এক বছরের সাজা দেন। অভিযোগ আছে, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন করায় আরিফুলকে ফাঁসানো হয়েছিল।

আরিফুল যে পত্রিকায় কাজ করেন তার নির্বাহী সম্পাদকের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কিছু সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। হাইকোর্ট আরিফুলের এক বছরের কারাদণ্ড দেয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন, পাশাপাশি রায়ের অনুলিপি চেয়েছেন। সেইসঙ্গে আরিফুলের গ্রেপ্তার ও সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। মধ্যরাতে এভাবে কারও বাড়িতে প্রবেশ এবং ৩০ থেকে ৪০ জন এ তৎপড়তায় জড়িত থাকা প্রয়োজনীয় ছিল কিনা তা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

আরিফুলের গ্রেপ্তারের বিবরণ এবং যেভাবে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাতে স্পষ্ট, কীভাবে আইনের অপব্যবহার হতে পারে। কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভিন সরকারি তহবিল ও অনুদানের টাকায় একটি পুকুর পুনঃখনন ও সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করেন, যা নিয়ে আরিফুল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। এরপরই এই ঘটনা ঘটে। আরিফুলের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণেই জেলা প্রশাসকের ক্রোধের শিকার হন আরিফুল। তাকে যেভাবে তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং নির্যাতন করা হয়েছিল তাতে এই অভিযোগ অবিশ্বাস করা কঠিন। নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আগেও নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে নির্যাতন করার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তাহলে এই ভয়াবহ ঘটনা থেকে আমরা কী ধারণা করতে পারি? রাতের অন্ধকারে যে কাউকে, যে কোনও জায়গা থেকে তুলে নেওয়া যেতে পারে? তাদের চোখ বেধে নির্যাতন করা যেতে পারে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই কারাগারে পাঠানো যেতে পারে? বানোয়াট অভিযোগে কাউকে দায়ী করা কী এতই সহজ? এ ধরনের অবস্থা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে কেবল যদি তার প্রভাব থাকে বা তার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়?

জেলা প্রশাসককে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের করা প্রশ্নের জবাব দেবে এবং আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের মাধ্যমে কাউকে তুলে নেওয়ার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেবে। আইনি প্রক্রিয়া না মেনে কাউকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর সংস্কৃতি বন্ধ করতেই হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago