করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প
কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা ও সহায়তাকর্মী আছেন। এই অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব, অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও ক্যাম্পগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব কোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্যাটালিন বেরকারু বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শরণার্থীরা ঘন বসতি পূর্ণ ক্যাম্পে বাস করে। যা কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
বাংলাদেশে মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারেসের (এমএসএফ) জনসংযোগ কর্মকর্তা তারিক আদনান বলেন, রোহিঙ্গারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছে। তাই, সেখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া খুবই কঠিন।
ক্যাম্পগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং এমএসএফ সম্ভাব্য সংক্রমণ মোকাবেলায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে।
ইউএনএইচসিআর-এর সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে কারো করোনাভাইরাস আছে সন্দেহ হলে তাকে অস্থায়ীভাবে আইসোলেশনে রাখা যেতে পারে।
বর্তমানে একমাত্র ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরীক্ষা করার সক্ষমতা আছে। দেশের আর কোনো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা যায় না।
প্রস্তুতি
কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার জানান, তারা ক্যাম্পগুলোতে জনসচেতনতা বাড়াচ্ছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন কোনো বিদেশি নাগরিকের শিবিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় না হলে সহায়তাকর্মীদের শিবিরে আসতে নিরুৎসাহিত করছি।’
এ ছাড়াও রোহিঙ্গা নেতারা শিবিরের ঘরে ঘরে গিয়ে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
রোহিঙ্গা আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কর্মী রাজিয়া সুলতানা জানান, পরিবারের সদস্যরা যাতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তার জন্য তারা নারীদের সম্পৃক্ত করছেন।
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ রোহিঙ্গা নারী বাড়িতে থাকেন এবং পরিবারের দেখাশোনা করেন। তারা পরিবারের সদস্যদের শেখাচ্ছেন দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চারবার হাত ধুতে হবে।’
কেউ সংক্রামিত হয়েছে জানা গেলে তাদের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঁচ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রামু ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি আইসোলেশন ওয়ার্ডও প্রস্তুত আছে।
আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী কি করা দরকার?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের আসল পরিসংখ্যান পেতে নিয়মিত সবার পরীক্ষা করা জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা প্রফেসর মুজাহেরুল হক বলেন, ‘চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, যা প্রকাশিত হয়েছে তার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি রোগী রয়েছে। সরকারের আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সঠিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি দরকার। চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) প্রস্তুত রাখা উচিত।’
চিকিৎসা পণ্য সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে
এমএসএফের মুখপাত্র তারিকের মতে, সহায়তাকর্মীরা চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের ঘাটতির ব্যাপারে আশঙ্কা করছেন। স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী চাপ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পগুলো এখনও চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে। তবে ভবিষ্যতে সার্জিক্যাল মাস্ক, সোয়াবস ও গ্লাভসের মতো কিছু সামগ্রী সরবরাহের ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন। উৎপাদনের অভাবে সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধেরও।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্যাটালিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আরও প্রস্তুত হচ্ছে। সহযোগী সংস্থাগুলোর যখন প্রয়োজন হবে তখন তা সরবরাহ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের কর্মী এবং কক্সবাজারে অবস্থিত কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
Comments