ডিসি সুলতানা ও তিন সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন, এনকাউন্টারে হত্যার হুমকি ও সাজানো ঘটনায় মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রাম থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আরিফুলের পক্ষে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু। থানার ওসি মাহফুজার রহমান এজাহার গ্রহণ করেন। এজাহারে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, সাবকে সিনিয়র সহকারী কশিনার নাজিম উদ্দিন, সাবেক সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও রাহাতুল ইসলাম।
অভিযুক্তদের কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। তারা সবাই মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা চলে গেছেন বলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান সরকার জানান।
বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আহত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম ও পরিবার এবং অফিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ এনে থানায় এজাহার করা হয়েছে। ‘আরিফুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই তার পক্ষে আমি থানায় এজাহারটি করি। এ সময় আমার সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে পুলিশ এজাহারটি আমলে নিয়েছেন এবং খুব শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে আদালতে দাখিল করবেন।’
আহত সাংবাদিক আরিফুল জানান, চিকিৎসাধীন থাকায় তার পক্ষে এজাহারটি থানায় দাখিল করেছেন তার সহকর্মী নুরুজ্জামান লাবু। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে হওয়া চরম অন্যায়ের বিচার চাই।’
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাজানো ও ভিত্তিহীন ঘটনায় আরিফুলকে মোবাইল কোর্টে সাজা, নির্যাতন, এনকাউন্টারে দিয়ে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় নদী তীরে। আর পরিবারের অজ্ঞাতসারে জামিন দেওয়ার বিষয়গুলো সাংবাদিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের কোনো ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটে এজন্যই অভিযুক্ত আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।’
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস জানান সাংবাদিক আরিফুলের ডান হাতে ফ্রাকচার হওয়ায় তাকে আরও বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হবে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান যে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তবে অভিযোগ এখনো এজাহারভুক্ত করা হয়নি। অভিযোগটি থানা পুলিশ তদন্ত করবেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘আপাতত এটিকে অভিযোগ হিসেবে দেখতে জবে, এজাহার নয়,’ ওসি বলেন।
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে গেল ১৩ মার্চ শুক্রবার মধ্যরাতে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের নির্দেশে তার তনিজন সহকারী কমিশনার সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তার বাড়ি শহরের ভকেশনাল মোড় (চরুয়াপাড়া) এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। সাজানো এনকাউন্টারে মেরে ফেলতে নিয়ে যাওয়া হয় ধরলা নদীর তীরে। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে সাজানো ভিত্তিহীন মাদকদ্রব্যের ঘটনা তৈরি করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে এক বছরের জেল দেওয়া হয়।
Comments