সাজেকে ১৩০ শিশু হামে আক্রান্ত

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অরুণ পাড়ায় হামে আক্রান্ত হয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাঁচ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
Sajek-1.jpg
সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় শিশুদের হাম-রুবেলার টিকা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্টার ফাইল ছবি

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অরুণ পাড়ায় হামে আক্রান্ত হয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাঁচ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

একই পাড়ায় হামে আক্রান্ত এক গর্ভবতী নারীর প্রিম্যাচিউর বেবি (অপরিপক্ব শিশু) জন্মানোর দুদিন পর শিশুটি মারা যায়।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী হারিন জয় ত্রিপুরা জানান, মারা যাওয়া শিশুরা হলো- সাগরিক ত্রিপুরা (১১), কোহেন ত্রিপুরা (সাড়ে ৩ বছর), দিশান ত্রিপুরা (০১), রুজিনা ত্রিপুরা (০৩) এবং দেড় বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশু দেবী ত্রিপুরা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্ষতিগ্রস্ত এসব অঞ্চলে চিকিৎসা দিচ্ছেন হারিন জয়।

তিনি বলেন, ‘সাজেক ইউনিয়নের অধীনে দুর্গম পাঁচটি পাহাড়ি পাড়ায় প্রায় ১৩০ শিশু হাম রোগে আক্রান্ত হয়েছে।’

‘অরুণ পাড়ার সাগরিক ত্রিপুরা ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম হাম রোগে মারা যায়। অন্য শিশুরা যথাক্রমে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৬ ও ১৭ মার্চ মারা যায়’, বলেন হারিন জয়।

স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান, সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পাড়াগুলো হলো অরুণ ত্রিপুরা পাড়া, লুংথিয়ান ত্রিপুরা পাড়া, তরুণ ত্রিপুরা পাড়া, কমলাপুর চাকমা পাড়া এবং কাইক্যা ত্রিপুরা পাড়া।

পাড়া প্রধানদের অভিযোগ, দুর্গম এলাকা হওয়ায় কোন চিকিৎসক কিংবা কোন কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীরা টিকা দেওয়ার জন্য তাদের পাড়ায় কোনদিন যাননি।

ওই এলাকার ওয়ার্ড সদস্য হিরানন্দ ত্রিপুরা বলেন, ‘হামে আক্রান্ত এলাকাগুলো খুবই প্রত্যন্ত, যেগুলো টিকা দেওয়ার আওতার বাইরে।’

‘আমাদের পাড়ার বাচ্চাদের কখনোই টিকা দেওয়া হয়নি এবং সরকারের লোকজনের কাছ থেকে এলাকার লোকেরা কোনো স্বাস্থ্যসেবা পায় না’, বলেন অরুণ পাড়ার কারবারি অল কুমার ত্রিপুরা।

চিন্তা রানী ত্রিপুরা (যিনি গর্ভাবস্থায় হামে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং অকালে সন্তান হারিয়েছেন) বলেন, ‘আমি বিনা চিকিৎসায় আমার বাচ্চা ছেলেকে হারিয়েছি। কেউ আমাদের সহায়তা করতে আসেন না।’

‘আমরা পাহাড়ে খুব অসহায়’, বলেন চিন্তা রানী।

যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন বিপাশ খীসা বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা সত্যিই কঠিন।’

‘সাজেক পর্যটন স্পট থেকে আক্রান্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য প্রায় দশ ঘণ্টা হাঁটতে হয়’, বলেন তিনি।

তবে তার দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কারণ রোগীরা এখন বিপদের বাইরে আছেন এবং বিজিবিসহ একটি মেডিকেল টিম আক্রান্ত অঞ্চলে কাজ করছে।

সিভিল সার্জন এর জন্য অভিভাবকদের কুসংস্কারকে দোষারোপ করেছেন। তিনি জানান, জনসচেতনতার প্রচার চালানো সত্ত্বেও পাহাড়ি অভিভাবকরা বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না।

বাঘাইছড়ি উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসতেখার আহমেদ বলেন, ‘হাম রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার পর আমাদের কর্মীরা গত ৬ মার্চ আক্রান্ত পাড়াগুলোতে গিয়েছিলেন এবং পনের বছরের কম বয়সী মোট ২৮৫ জন শিশুকে টিকা দিয়েছেন।’

‘আক্রান্ত শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছিল, যার কারণে এই রোগটি মারাত্মক আকার নেয়’, বলেন তিনি।

ইসতেখার আহমেদ আরও বলেন, ‘আক্রান্ত শিশুরা এখনও বিপদের বাইরে নয়।’

পাঁচ শিশুর মৃত্যুর জন্য দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া গেলে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো যেত।’

ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে আসা স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, আক্রান্ত সকল শিশুর বয়স এক থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, ফুসকুড়ি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং বমি।

সম্প্রতি বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় এক শিশু মারা যায় এবং প্রায় ৪০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন, যাদের মধ্যে প্রায় ৩৩ জন শিশু রয়েছে।

ওই এলাকাতেও হাম ছড়িয়ে পড়েছিল বলে স্থানীয়রা জানালেও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দাবি করেন- এটি একটি ‘অজানা রোগ’।

২০১৭ সালে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নয় জন শিশু চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় হামের কারণে মারা গিয়েছিল।

২০১৪ সালে বৃহৎ আকারে হামের টিকা দেওয়ার পর, পরের বছর হাম আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল।

প্রতি চার বছরে বিশেষ হামের টিকা দেওয়ার প্রচারণা ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পরিচালিত হয়েছিল।

এ বছর বাংলাদেশে হাম ও রুবেলার জন্য ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী ৩৪ মিলিয়ন শিশুকে টিকা দেওয়ার অভিযান গত বুধবার শুরু হওয়ার কথা ছিল।

তবে, চলমান করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এই কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Deeper crisis feared as 219 factories shut

With 219 garment factories shut in Ashulia yesterday amid worker unrest along the industrial belts, Bangladesh’s apparel sector is feared to get into a deeper crisis if production does not resume on Saturday after the weekend.  

4h ago