করোনাভীতি: সুষ্ঠু চিকিৎসার অভাবে বৃদ্ধের মৃত্যু

Shylhet-1.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ভীতিতে সুষ্ঠু চিকিৎসার অভাবে সিলেট নগরীতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে নিজ বাসাতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত গিয়াস উদ্দিন (৬৫) নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার ৪৪ নম্বর বাসার বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন।

গত ১৪ মার্চ তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছেলে দেশে ফেরেন। এর সপ্তাহখানেক পর গত ২২ মার্চ থেকে গিয়াস উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেন এবং এ অবস্থায় ঘরেই তার মৃত্যু হয়।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিনের কিডনি রোগী। শ্বাসকষ্ট নিয়ে সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনে গেলে তারা তাকে গ্রহণ করেনি, সম্প্রতি তার ছেলে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন বলে।’

গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর সিলেট শহরের কোন হাসপাতাল-ক্লিনিকই তাকে চিকিৎসার জন্য গ্রহণ করেনি, এমনকি নির্ধারিত ডায়ালাইসিস করানোর তারিখেও ওই হাসপাতালে তার ডায়ালাইসিস করানো হয়নি।’

কয়েস লোদী আরো বলেন, ‘সবাই করোনাভাইরাসের ভয় পাচ্ছিল তার বিদেশফেরত ছেলের কারণে, অথচ বাসায় তার ছেলে, তার স্ত্রী এবং প্রায় ৯০ বছর বয়সী শাশুড়িও সুস্থ আছেন এখনো। কিন্তু তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগে বিনা চিকিৎসায় ঘরেই মারা গেলেন।’

বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানোর পর তিনি সিভিল সার্জনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পারিবারিকভাবে দাফনের নির্দেশ দিলে, ওই রাতেই মানিক পীর সংলগ্ন কবরস্থানে গিয়াস উদ্দিনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় বলে জানান স্থানীয় কাউন্সিলর।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘চিকিৎসা পাওয়া সবার অধিকার। করোনাভীতির কারণে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়ে প্রতিবাদ সমাজের সচেতন মানুষ হিসেবে করা উচিত। কারণ প্রতিবাদ না হলে অনেক সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসাতেই মারা যাবেন।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেট ব্রাঞ্চের ম্যানেজার আতিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গিয়াস উদ্দিন আমাদের এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সপ্তাহে তিনদিন তার ডায়ালাইসিস করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘গত ২১ মার্চ রাত ১০টায় শেষবার ডায়ালাইসিস নেওয়ার পরদিন সকালে শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে তিনি আসেন। করোনাভাইরাস ভীতি নয় বরং তার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না হওয়ায় আর আমাদের কিডনি ফাউন্ডেশনে আইসিইউ না থাকায় তাকে অন্য কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডায়ালাইসিস করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।’

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘কোভিড-১৯ আক্রান্ত ভেবে সাধারণ মানুষদের যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, তা খুবই দুঃখজনক। একজন বয়স্ক মানুষ বিভিন্ন কারণে রোগে ভুগতে পারেন, তার জ্বরসহ অন্যান্য লক্ষণ থাকতেই পারে, সেটাকে যদি কোভিড-১৯ ভেবে চিকিৎসা না দেওয়া হয়, তবে তা দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘নিরাপদে থাকার জন্য সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে, যার মানে তো এই না যে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত। উনার মেডিকেল হিস্ট্রি বলছে তিনি আগে থেকেই কিডনি রোগে ভুগছিলেন এবং ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি স্বাভাবিকভাবেই মারা যেতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবাইকেই বলছি কোন রোগী যাতে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে না যায়। অনেক হাসপাতাল ভয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে না, অনেক চিকিৎসক চেম্বারে না বসে ফোনে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু এটা তো চিকিৎসা পদ্ধতি না, রোগীকে সামনে থেকে দেখতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Four of a family killed in Sylhet hillock collapse

The incident occurred around 2:00am in Bakhtiarghat area under Lakshanaband Union of Golapganj upazila

16m ago