নির্দেশনা না মেনে পিপিই ব্যবহার করছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা

পিপিই পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ছবি: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্যর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ প্রতিরোধে যখন দেশে ডাক্তাররা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) সংকটে আছেন, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা না মেনে পিপিই ব্যবহার করছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

গত ১৫ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সহযোগিতায় ‘করোনাভাইরাস ২০১৯ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এর যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার’ মর্মে একটি নির্দেশনা প্রচার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নির্দেশনায় বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পিপিই তথা স্বাস্থ্য সেবা দাতাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে এবং এ পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে দেশের স্বাস্থ্য সেবাদাতাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঠিক নিয়মে যৌক্তিকভাবে সামগ্রীসমূহ ব্যবহার করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছাড়াও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তাদের সংরক্ষিত পিপিই স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার করার জন্য দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা পিপিই পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এই পোস্টটি উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজ থেকেও শেয়ার করা হয়।

পোস্টে লেখা ছিল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২টি এবং প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য ৯টি পিপিই প্রদান করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের নিজ উদ্যোগে সংগৃহীত ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া পিপিই থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরতদের কিছু পিপিই দেওয়া হয়েছে এবং কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে।’

পিপিইর যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘যদি এগুলো আমাদের ব্যবহারের প্রয়োজন না থাকে, তবে তা স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে প্রয়োজন অনুযায়ী হস্তান্তর করবো।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের, এমনকি আমারও পিপিই ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কারণ, আমরা সরাসরি আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যাই না। এগুলো তাদেরই দরকার যারা আক্রান্ত রোগীকে সরাসরি সেবা দেবেন।’

সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকেরই পিপিই প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে তাদের, যারা হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এগুলো ব্যবহার না করতে তাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।’

হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে পিপিইর প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ডা. দেবপদ রায় বলেন, ‘এই দায়িত্ব গ্রাম পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী, স্থানীয় কাউন্সিলের প্রতিনিধি, পুলিশ ও প্রশাসন মিলে নিশ্চিত করছে। আর হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে তো সন্দেহভাজন আক্রান্ত  ব্যক্তির কাছে যেতে হয় না। কয়েক মিটার দূরত্ব নিশ্চিত করলেই হয়। সেক্ষেত্রে পিপিই প্রয়োজন নেই।’

তবে যদি সন্দেহভাজন কেউ আদেশ না মানেন এবং তাকে জোর করে কোয়ারেন্টিন করতে হয়, সেক্ষেত্রে তাকে ধরতে পিপিই ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান ডা. দেবপদ।

এই রিপোর্ট প্রকাশের আগেই ছবিটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Four top NBR officials sent into retirement

The four reportedly supported the recent protest by the NBR officials

1h ago