করোনাভাইরাস: গরমে প্রাদুর্ভাব কমার সম্ভাবনা কতটা?

ছবি: রয়টার্স

প্রাথমিকভাবে, অন্যান্য সংক্রামক রোগের মতো করোনাভাইরাসও মৌসুমী হতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে, এখন অধিকাংশ ভাইরোলোজিস্টই গরমে করোনার প্রাদুর্ভাব কমার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন।

কোভিড-১৯ নিয়ে বিবিসিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন রিচার্ড গ্রে।

টাইফয়েড, হাম কিংবা ফ্লু’র মতো অনেক সংক্রামক রোগ একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে বিস্তার লাভ করে। এসব রোগের ভাইরাস নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সক্রিয় হয়। কোভিড-১৯ শুরুতে কম তাপমাত্রার অঞ্চলগুলোতেই মূলত ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে। সে কারণে অনেকেই ধারণা ছিল গরম বাড়তে থাকলে এর সংক্রমণ ক্ষমতা কমে যাবে।

২০০২ সালের নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল করোনাভাইরাস গোত্রের আরেক ভাইরাস সিভিয়ার অ্যাকিউইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স)। পরের বছর জুলাই পর্যন্ত চলে সার্সের প্রকোপ। অর্থাৎ, গরমের সময়ে সার্সের প্রাদুর্ভাব কমেছে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটি হবে কিনা, বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন।

অন্যদিকে, মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য থেকে, যা তুলনামূলকভাবে উষ্ণ অঞ্চল। এখনও মধ্যপ্রাচ্যে এ ভাইরাস ফিরে ফিরে আসে।

কোভিড-১৯, যার আনুষ্ঠানিক নাম ‘সার্স-কোভ-২’ একেবারেই নতুন ধরনের ভাইরাস। তাপমাত্রা বাড়া-কমার সঙ্গে এর আদৌ কোনো পরিবর্তন ঘটবে কি না সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে, জেনেটিক কোড বিশ্লেষণে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো।

১০ বছর আগে যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ’ থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। কেট টেমপ্লেটন নামের এক গবেষক তিন ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখিয়েছেন যে, মূলত শীতকালেই সেগুলো সক্রিয় হয়। ওই তিন ভাইরাস ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মানবদেহে সক্রমিত হতে থাকে। মানবদেহে প্রবেশের পর আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা যায়। চতুর্থ একটি করোনাভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি দেখেন, এটি অনেক বিক্ষিপ্ত। মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে ধ্বংস করে দিতে পারে।

শুধু তাপমাত্রা নয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য আর্দ্রতা, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদিও নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। করোনাভাইরাস নিয়ে প্রাথমিক গবেষণায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চল- চীনের উহান, ইরান, ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান প্রায় একই অক্ষাংশে। এ অঞ্চলগুলোর মধ্যে আবহাওয়ার মিলও আছে।

তবে, শীতকালেই কোভিড-১৯ ছড়াবে এমন সম্ভাবনাকে বাতিল করে দিয়েছেন সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর পরিস্থিতি। সিঙ্গাপুরের মতো গরম আবহাওয়ার দেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মতো গরম আবহাওয়ার দেশেও দিনদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

স্টকহোমের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জ্যান অ্যালবার্ট বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত সঠিক তথ্য-উপাত্ত গবেষকদের হাতে না থাকায় এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এটা স্প্যানিশ ফ্লুয়ের মতোও হতে পারে। গ্রীষ্মের শুরু থেকেই স্প্যানিশ ফ্লুয়ের প্রার্দুভাব দেখা দেয়, শীতকালে এর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়ে।’

তিনি জানান, নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শীতকালে শুরু হয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই ভাইরাস গরমকালে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে কি না। গরমকালে এটা আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এখনো এ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

করোনাভাইরাস মূলত ‘এনভেলপ ভাইরাস’ এর একটি পরিবার। এনভেলপ ভাইরাসগুলো এক ধরনের তৈলাক্ত প্রোটিনের প্রলেপের মধ্যে থাকে। এটাকে ‘লিপিড বাইলেয়ার’ বলা হুয়। মুকুটের মতো স্পাইক থাকে বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে করোনাভাইরাস। করোনা শব্দটি স্প্যানিশ, এর অর্থ মুকুট ।

এনভেলপ ভাইরাসের উপর বেশ কয়েকটি গবেষণা বলছে, তৈলাক্ত প্রলেপের কারণে এ ধরনের ভাইরাস গরমে সংবেদনশীল। শীতে তৈলাক্ত প্রলেপ রাবারের মতো শক্ত হয়ে যায়। তাই তখন মানবদেহের বাইরে ভাইরাসটি অনেক সময় পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।

এনভেলপ ভাইরাসের প্রায় সব কয়টি পরিবারের ভাইরাসই একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে শক্তিশালী হয়। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ এর গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ২১ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৪০ শতাংশ আর্দ্রতায় যেকোনো কঠিন পৃষ্ঠে ভাইরাসটি ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।

অন্যান্য করোনাভাইরাসের উপর গবেষণা বলছে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে সর্বোচ্চ ২৮ দিন পর্যন্ত এরা মানবদেহের বাইরে টিকে থাকতে পারে। তাই, নিশ্চিতভাবেই বলা চলে, অন্যান্য করোনাভাইরাসের তুলনায় উচ্চ তাপমাত্রায় টিকে থাকার ক্ষমতা কোভিড-১৯ এর আছে।

অন্যদিকে একদল চীনা গবেষক বলছেন, বাতাসে ৩০ মিনিটের মতো ভেসে থাকতে পারে কোভিড-১৯। প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাসটি কাঁচ, কাপড়, ধাতু, প্লাস্টিক ও কাগজের ওপর দুই থেকে তিন দিন টিকে থাকতে পারে। মানুষের মল বা শারীরবৃত্তিয় তরলে করোনাভাইরাস পাঁচ দিনেরও বেশি টিকে থাকতে পারে জানিয়েছেন চীনা গবেষকরা।

Comments

The Daily Star  | English
customs houses open on weekend

All customs houses open this weekend to clear backlog

All customs houses across the country will remain open for import and export activities this weekend – today and tomorrow..The customs policy wing of the National Board of Revenue (NBR) yesterday issued directives to the customs houses in Chattogram, Dhaka, Benapole, Mongla, Customs House

2h ago