করোনাভাইরাস

পাহাড়ে প্রথাগত লকডাউন

প্রথাগতভাবে পাড়া বন্ধের মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন পাহাড়ি জনগণ। ছবি: স্টার

মহামারি করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রথাগতভাবে পাড়া বন্ধের মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ। কয়েকদিন আগে থেকেই তারা পাড়া বন্ধ করা শুরু করেন।

সমতলের অনেকের কাছে অসম্ভব মনে হলেও বাস্তবে মহামারির মতো কোনো দুর্যোগে কেউ যখন পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের সহযোগিতা করতে তাদের পাড়ায় যান, সেখানকার লোকজন সেসময় সাহায্য নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন না। সাহায্যকারী ব্যাক্তি বা সংস্থা গেটের অপর প্রান্তে সাহায্য সামগ্রী রেখে চলে যান। 

প্রায় তিন ঘণ্টা সময় পার হওয়ার পর পাড়ার লোকজন গেটের অপর প্রান্তে রেখে যাওয়া সাহায্য সামগ্রী পাড়ায় নিয়ে আসেন বলে জানান সিং চ্যং পাড়ার প্রবীণ মেনবি ম্রো। তিনি বলেন, ‘গেট বন্ধ হওয়ার পর পাড়ার কেউ বাইরে যান না, আর বাইরের কাউকে পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হয় না।’

রেনিক্ষ্যং মৌজার একটি পাড়ার প্রধান লেং পুং ম্রো জানান, দেশে যখন কোনো মহামারি আসে তখনই পাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘শুনেছি করোনাভাইরাস নামে এক মহামারি এসেছে। তাই আমরা বাঁশ দিয়ে খাসুর (গেট) তৈরি করে আমাদের পাড়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে পারলেই কেবল মহামারির মতো যেকোনো দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।’

ত্রাণ দিতে আসা ব্যক্তি বা সংস্থাদেরও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে জানান ম্রো পাড়ার প্রধান লেং পুং। তারা পাড়ার গেটে বিতরণ সামগ্রী রেখে চলে যান। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর পাড়ার লোকজন গেট থেকে ত্রাণ ও বিতরণ সামগ্রী পাড়ায় নিয়ে আসেন।

কেন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত গেটের বাইরে ত্রাণ সামগ্রী রাখা হয় জানতে চাইলে লেং পুং বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সাহায্যের জন্য যে খাদ্যদ্রব্য আমাদেরকে দেওয়া হয়, সেগুলো অসুস্থ কোনো ব্যক্তি দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকলে ওই নির্দিষ্ট সময় পরে তা বিশুদ্ধ হয়ে যায়।’

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পাড়াগুলো বন্ধ রাখা হবে বলে জানান বিভিন্ন পাড়ার প্রধানরা।

বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য সিংইয়ং ম্রো জানান, খাসুর (গেট) দিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ২০টি পাড়া বন্ধ করা হয়েছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, ‘আমরা গতকাল কয়েকটি পাড়ায় সরকারের বরাদ্দ চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন সহযোগিতা নিয়ে যাই। পাড়া প্রধানদের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো গেটের বাইরে রেখে আসা হয়েছে।’

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এই প্রথা সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত বলে জানান তিনি।

মহামারির মতো দুর্যোগের সময় পাহাড়ে পাড়া বন্ধ প্রথা অনেক পুরোনো বলে জানান ম্রো ভাষার লেখক সিংইয়ং ম্রো।

তিনি বলেন, ‘এই প্রথার মাধ্যমে পাড়ার লোকজন মহামারি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখেন। তাদের পূর্বপুরুষেরাও বিভিন্ন মহামারি যেমন, কলেরা, হাম ইত্যাদি দুর্যোগের সময় খাসুর দিয়ে পাড়া বন্ধ করে দিতেন।’

Comments

The Daily Star  | English

DU JCD leader stabbed to death on campus

Shahriar Alam Shammo, 25, was the literature and publication secretary of the Sir AF Rahman Hall unit of Jatiyatabadi Chhatra Dal

33m ago