‘কবে ঢাকা যাব জানি না’
মার্চ মাসের ১৪ তারিখে যখন ঢাকা থেকে জেদ্দার ফ্লাইটে উঠি তখনও জানতাম না এভাবে আটকে যাব। আমাদের ফেরার কথা ঠিক পরদিন ১৫ তারিখ। দুপুর পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ সৌদি আরব থেকে দুই সপ্তাহের জন্য আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বাতিল হলো। আর দেশে ফিরতে পারিনি। আজ-কাল-পরশু করে আজ ১৫ দিন হয়ে গেল।
এদিকে, ঢাকাতেও ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব ফ্লাইট বন্ধ। অর্থাৎ, কবে ঢাকা ফিরব জানি না। আমরা এসেছিলাম একদিনের জন্য। জামাকাপড় আর খাবারের প্রস্তুতিও সেরকমটাই ছিল।
আমরা আছি জেদ্দার খালিদিয়া সিটি কম্পাউন্ডের ভেতরে। এখানেই উড়োজাহাজের ক্রুদের থাকার ব্যবস্থা। প্রথম প্রথম খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। কম্পাউন্ডের অন্য ক্রু-রা এগিয়ে এসেছে আমাদের বিপদে। এমনকি তারা আমাদের জামাকাপড় দিয়েও সাহায্য করেছে। বাইরে সব দোকান বন্ধ। টাকা থাকলেও পারছি না কিছু কিনতে।
বিভিন্ন দেশের ক্রু, যারা জেদ্দা বেইজে থাকে, তারা বারবার আমাদের বলেছে কোন কিছু দরকার হলে যেন আমরা তাদের কাছে যাই। এই বিপদের দিনে এটাই বড় স্বান্ত্বনা।
আগামী ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি আরবে কারফিউ চলবে। আমাদের বলে দিয়েছে দিনের বেলা দুই ঘণ্টার জন্য খাবার কিনতে যেতে পারব। আর সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ।
চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলেও ভেঙে পড়িনি আমরা। নিয়মিত ব্যায়াম থেকে শুরু করে নিজের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক হয়েছি । ডেটল, সাবান পানি দিয়ে নিজেরাই ঘর পরিষ্কার করি, আর স্যানিটাইজার ব্যবহার করি।
অনেক কিছুই মানুষের হাতের বাইরে থাকলেও সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার বাইরে কিছু না। তিনিই পারেন এই দুযোর্গ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
তাই আসুন নিজের যত্ন নেবার পাশাপাশি সৃস্টিকর্তার কাছে আমরা প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের রক্ষা করেন।
ডানা মির্জা: বিদেশি একটি এয়ারলাইনে কর্মরত কেবিন ক্রু
Comments