বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ‘মাস্ক কূটনীতি’

করোনা মহামারিতে আক্রান্ত ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ায় দেশগুলোতে জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে চীন। রাশিয়া, কিউবা, দক্ষিণ কোরিয়া প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে এই মহামারি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখলেও চীনের এই প্রচেষ্টা ও আগ্রহের পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য আছে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
চীন সরকারের চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে গ্রিসের এথেন্স বিমানবন্দরে নামছেন সহায়তা দলের সদস্যরা। ২১ মার্চ ২০২০। রয়টার্স

করোনা মহামারিতে আক্রান্ত ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ায় দেশগুলোতে জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে চীন। রাশিয়া, কিউবা, দক্ষিণ কোরিয়া প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে এই মহামারি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখলেও চীনের এই প্রচেষ্টা ও আগ্রহের পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য আছে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা ও জরুরি মেডিকেল সরঞ্জামের অভাবে মারাত্মক সংকটের মুখে পড়ছেন, তখন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে চীন। সহায়তা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্রকেও।

বেইজিংয়ের এই প্রচেষ্টাকে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘মহামারির বিরুদ্ধে চীনের লড়াই’ হিসেবে প্রচার করছে। গণমাধ্যমে এসব সংবাদ প্রচারের পর বিশ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পশ্চিমের বিশ্লেষকরা চীনের এমন তৎপরতাকে ‘মাস্ক কূটনীতি’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে, ৩০০ কোটির বেশি মানুষ এই মূহূর্তে করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে লকডাউনে আছেন। চীনে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি মানুষ এই রোগে মারা গেছেন। এ মাসের শুরু থেকে  করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে, ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ হওয়ার পরপরই প্রথমবারে মতো চীন সে দেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠায়।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকটের সময় এটিই প্রথমবারের মতো চীনের মানবিক সহায়তা দেওয়ার উদাহরণ নয়। তবে বেইজিং কর্মকর্তাদের মতে, ১৯৪৯ সালের পর এটাই সবচেয়ে বড় উদ্যোগ।

গত বৃহস্পতিবার চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুও জাওহুই বলেন, ‘আমরা ৮৩টি দেশকে করোনাভাইরাসের টেস্টিং কিট, মাস্কসহ জরুরি মেডিকেল সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। কারণ চীন সহানুভূতিশীল এবং সংকটে থাকা দেশগুলোর যা প্রয়োজন আমরা তা দিতে রাজি আছি। করোনাভাইরাস ঠেকানোর অভিজ্ঞতা চীন বিশ্বকে জানাতে চায়।’

চীনের এমন প্রতিক্রিয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন পশ্চিমা সমালোচকরা। গত চার মাস ধরে তারা বিভিন্ন সময় বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন।

পোলিশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষক মার্সিন প্রিজিচোডনিয়াক বলেন, ‘বিশেষত মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপে সহযোগিতার ব্যাপারে বেইজিংয়ের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও এর পিছনে সম্ভাব্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জরুরি মেডিকেল সরঞ্জামের জন্য দেশগুলোকে সরাসরি চীনা সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। হতে পারে চীন তাদের শক্তিশালী নেতৃত্বের জন্যই নিজ দেশে ভাইরাসটি মোকাবিলা করতে পেরেছে। আর সে কারণেই দেশগুলো তাদের কাছে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করছে।’

জাপানের রিতসুমেকান বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ ফরেন এইড বিশেষজ্ঞ মিওয়া হিরোনো বলেন, ‘২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইবোলা প্রাদুর্ভাবের সময় বেইজিং পশ্চিম আফ্রিকায় চিকিত্সা সহায়তা দিয়েছিল। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সংকটাপন্ন দেশগুলোতে মাস্কসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করছে চীন। অনেকেরই ধারণা, এই “মাস্ক কূটনীতি”র মাধ্যমে, সহানুভূতি দেখিয়ে চীন মূলত বিশ্বব্যাপী তার নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।’

‘মাস্ক কূটনীতি’র বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘অনেক দেশই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু চীন না, সব দেশই বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের অবস্থান ভালো করতে চায়। এই দুঃসময়ে চীনের উদ্যোগ মানবতার স্বার্থে প্রয়োজনীয়। তবে, চীনের সহানুভূতিতে অন্ধ হয়ে অনেকেই তাদের ব্যাপারে নিজেদের অতীত অবস্থান ও ইতিহাস ভুলে যেতে পারে। যে দেশগুলো সবসময় চীনের পররাষ্ট্র নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার- প্রযুক্তি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয় নিয়ে এতোদিন সমালোচনা করে এসেছে, তারাই এখন চীন মাস্ক দিয়েছে বলে সেসব কিছু ভুলে যেতে পারে।’

হিরোনো বলেন, ‘তবে, বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য আসলেই এটা কিনা সেটা নিশ্চিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না।’

Comments

The Daily Star  | English

Govt to form commissions to reform six key sectors: Yunus

The interim government has decided to form six commissions to bring reform in six major sectors, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus today told the nation in a televised speech

21m ago