ইতালির বহু মানুষ বিশ্বাস করে না করোনার প্রতিষেধক নেই!

ইতালিসহ ইউরোপের বহু মানুষ এখনো বিশ্বাস করে না করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নেই। তারা এটাকে প্রাকৃতিক ভাইরাস বলেও মানতে রাজি নয়। তাদের মতে এই ভাইরাস প্রকৃতি থেকে আসেনি। এটাকে ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী মানুষের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে। যারা এই ‘কোভিড ১৯’ নামের জীবাণু অস্ত্র প্রয়োগ করেছে তাদের কাছে প্রতিষেধকও আছে। প্রয়োগকারীদের টার্গেট পূরণ হলেই বাজারে প্রতিষেধক আনা হবে।
Italy corona death
ইতালির সেরিয়াতে করোনায় মৃত এক নারীর আত্মার শান্তির জন্যে প্রাথর্না করছেন ধর্মযাজক। ২৮ মার্চ ২০২০। ছবি: রয়টার্স

ইতালিসহ ইউরোপের বহু মানুষ এখনো বিশ্বাস করে না করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নেই। তারা এটাকে প্রাকৃতিক ভাইরাস বলেও মানতে রাজি নয়। তাদের মতে এই ভাইরাস প্রকৃতি থেকে আসেনি। এটাকে ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী মানুষের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে। যারা এই ‘কোভিড ১৯’ নামের জীবাণু অস্ত্র প্রয়োগ করেছে তাদের কাছে প্রতিষেধকও আছে। প্রয়োগকারীদের টার্গেট পূরণ হলেই বাজারে প্রতিষেধক আনা হবে।

যারা এসব বিশ্বাস ধারণ করেন তারা পুলিশের চোখ এড়িয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোনো প্রকারের প্রটেকশন ব্যবহার করছেন না। তারা মনে করেন এটা উন্নত বিশ্বের রাজনৈতিক খেলা। এই খেলার মাধ্যমে মোড়ল দেশগুলো বিশ্বের অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে তাদের দখল জোরদার করার চেষ্টা করছে। যেসব দেশ নতুন করে অর্থনীতিতে মাথা উঁচু করার চেষ্টা করছে তাদের শায়েস্তা করার চেষ্টা হচ্ছে।

কেউ কেউ মনে করেন উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর তুলনায় জন্মের হার অনেক কম। যে কারণে কর্ম অক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তরুণ্য বাড়ছে না। করোনা নামের জীবাণু অস্ত্র প্রয়োগ করে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো কিছু বৃদ্ধ মানুষ কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে।

আরেক দল মনে করেন, ল্যাবে তৈরি করোনাভাইরাস অসাবধানতাবশত ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন আর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

এর বাইরে আরও মানুষ আছেন যারা মনে করেন, করোনাভাইরাস ছড়ানো হয়েছে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি করার জন্য। তাদের মতে উন্নত দেশগুলোয় করোনার ছোবল এত ভয়াবহ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো গণতন্ত্র। অধিকাংশ দেশের শাসকরা মনে করেন লকডাউন করা মানে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। তারা একটা সিদ্ধান্ত নিতে এত বেশি সময় নষ্ট করেন যে ততদিনে মহামারি সৃষ্টি হয় এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বর্তমান সময়ে এর সব থেকে বড় উদাহরণ হলো ইতালি।

এসব বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা হয় রোম থেকে প্রকাশিত বহু ভাষার অভিবাসী ম্যাগাজিন মেইলটিং এর বাংলা বিভাগের সাবেক সম্পাদক তমাল আহমেদের সঙ্গে। তার মতে, ‘একটু মাথা ঘামালেই বোঝা যাবে করোনা কোনো প্রাকৃতিক ভাইরাস নয়। আর এটা বুঝতে হলে বর্তমান বিশ্বরাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের জন্য কেনো চীনের উহান অঞ্চলকে বেছে নেওয়া হলো? কেনো বেইজিং বা সাংহাইতে মহামারি সৃষ্টি হলো না? উহান থেকে কিভাবে সরাসরি ইউরোপে চলে এলো? ইউরোপের কিছু দেশ এখনো নিশ্চিন্ত আছে কীভাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলানো দরকার।’

চীন বহুদিন থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এখন পৃথিবীর সব থেকে বড় রপ্তানিকারক দেশ। তারা আন্তর্জাতিক সাগর ব্যবসায় ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে। যা বিশ্বরাজনীতিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। মোড়ল দেশগুলোর নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘ দিন যাবৎ পরিকল্পনা করছিলেন যুদ্ধ ছাড়া চীনকে কীভাবে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তমালের মন্তব্য, ‘মানুষ মারার এই জঘন্য ষড়যন্ত্রের সঙ্গে চীনারাও জড়িত। এই হত্যা মিশনে তাদেরও স্বার্থ আছে। এতদিন যারা চীনকে দমন করার কথা বলেছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক কঠোর করার কথা বলেছে, আজ তারাও চীনকে বন্ধুদেশ বলতে বাধ্য হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলতে বাধ্য হয়েছেন, তার দেশ চিনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কাজ করতে প্রস্তুত।

তমাল আরও বলেন, ‘করোনা ঝড় থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। চীন বা দক্ষিণ কোরিয়ার শাসনব্যবস্থায় মানুষর ঝোঁক তৈরি হতে পারে।

তমালের মতে, ‘করোনার প্রতিষেধক কোনো উন্নত দেশ থেকে বাজারজাত করা হবে না। এটা বাংলাদেশের মতো কোনো উন্নয়নশীল দেশ থেকে বাজারে আনা হবে, যাতে উন্নত দেশগুলোকে কোনো প্রকারের প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়।’

শুধু ইতালি নয়, ইউরোপের আরও অনেক দেশের অভিবাসীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, ওই সব দেশেও একদল মানুষ তমাল আহমেদের মতোই বিশ্বাস ধারণ করেন। ভিন্নমত চর্চা করেন। যদিও ইতালির গবেষকরা এসব ধারণা বা বিশ্বাস একদম উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের মানুষ এখনো বুঝতে পারছে না করোনাভাইরাস কতো ভয়াবহ ব্যাপার। এই জন্যে তারা গতানুগতিক ধারায় চিন্তা করছে। অবহেলা, অবজ্ঞা করছে।

গবেষকরা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে এখন আর ভিন্ন চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। এটাকে বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। যারা এটাকে নিয়ে হেলাফেলা করবে তারাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অন্যদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

ইতালীয় গবেষকদের মতে, করোনা মহামারি আগামী অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে এবং এর প্রতিষেধক বাজারে আসতে সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে।

ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ভিভা ইতালিয়া দলের প্রধান মাত্তেয় রেনছি ইতালি সরকারের সমালোচনা বলেন, ‘ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকা কোনো সমাধান নয়। এতে ইতালির সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস বেশি বয়সের মানুষদের উপর বেশি আক্রমণ করছে। সুতরাং বয়স্ক মানুষদের ঘরে রেখে তরুণ যুবকদের কাজে ফিরে যাওয়া উচিত। কর্মস্থলগুলো খুলে দেওয়া উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। অন্যথায় দেশের অর্থনৈতিক চাকা থেমে যাবে। দেশ থেমে যাবে। মাথা উঁচু করা দেশ হিসেবে ইতালির যে অবস্থান এখন আছে তা ধরে রাখা যাবে না।’

সিনোর রেনছি করোনাভাইরাসকে সরাসরি রাজনৈতিক ভাইরাস না বললেও তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনেক মানুষ এটাকে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ বলে জানে। কেউ কেউ চীনের বিরুদ্ধে মামলাও করতে শুরু করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

26m ago