২৫ দিনে ৩০১ শয্যার করোনা হাসপাতালের জন্ম অথবা অপমৃত্যু!

চীন মাত্র ৯ দিনে একটি হাসপাতাল বানিয়ে বিশ্বকে মানে উন্নত বিশ্বকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
Dr Zafrullah Chowdhury
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

চীন মাত্র ৯ দিনে একটি হাসপাতাল বানিয়ে বিশ্বকে মানে উন্নত বিশ্বকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।

চীনের মতো একটি হাসপাতাল ঢাকার তেজগাঁওয়ে তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, গত দুই দিন এমন কিছু সংবাদ দেখছিলাম। আমরা প্রায় কোনো কাজই ঠিক সময়ে শেষ করতে পারি না। সেখানে অল্প সময়ে চীনের মতো হাসপাতাল? সত্যতা জেনে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকলো না।

খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম হাসপাতাল তৈরির বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে, ভাঙচুরও হয়েছে। জানা গেল, আকিজ গ্রুপ তৈরি করছে হাসপাতাল। তারপর কানে এলো এই উদ্যোগের সঙ্গেও সম্পৃক্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র— ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সম্প্রতি করোনাভাইরাস পরীক্ষার স্বল্প মূল্যের কিট উদ্ভাবন করে তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আলোচনায় এসেছেন।

মুঠোফোনে কথা হলো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে।

শোনা যাচ্ছে করোনা চিকিৎসার জন্যে নতুন হাসপাতাল তৈরি করছেন।

• হাসতে হাসতে ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী বললেন, হ্যাঁ, হাসপাতাল তৈরি করছি। দেশের মানুষের জন্যে কিছু করার চেষ্টা করতে হবে তো। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। সেই দেশের মানুষ এখন চিকিৎসা পাবে না, তা হতে পারে না। করোনার আতঙ্কে জ্বর-কাশির রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছেন। তারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত, না সাধারণ জ্বর শনাক্ত হতে হবে তো। আমাদের ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর জেনারেল হাসপাতাল। কিডনি ডায়ালাসিস সেন্টারের কারণে অনেক জায়গা লেগে গেছে। সাধারণ রোগীদের অনেক চাপ। সেকারণেই নতুন হাসপাতালের চিন্তা।

গত কয়েকদিনে তো আপনার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট তৈরি নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু, নতুন হাসপাতাল সম্পর্কে কিছু বলেননি।

• গত কিছুদিন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এরই এক পর্যায়ে কথা হলো আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। অত্যন্ত অমায়িক মানুষ তিনি। মানুষের জন্যে কিছু করতে চান। বিশেষ করে করোনার এই সংকটকালে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। তিনি বললেন, তেজগাঁওয়ে আমাদের জায়গা আছে। সেখানে আপনি কিছু করেন। বললাম, খুব ভালো প্রস্তাব। চীন উহানে অল্প কয়েকদিনে এত বড় হাসপাতাল বানিয়ে ফেলল। আমরাও করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্যে একটি হাসপাতাল বানাতে পারি। আমরা হাসপাতালটি বানিয়ে তারপর জানাতে চেয়েছিলাম।

ছবি: সংগৃহীত

তার মানে হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে?

• আমরা প্রায় ১০ দিন আগে কাজ শুরু করেছি। শেখ বশির উদ্দিন নিজে উদ্যোগী হয়ে জায়গাটি হাসপাতাল উপযোগী করে দিয়েছেন। ৩০১ শয্যার অত্যধুনিক করোনা চিকিৎসার হাসপাতাল বানাতে চেয়েছি। এখানে ২০টি আইসিইউ, ৩০টি আইসোলেশন (ডব্লিউএইচও স্ট্যান্ডার্ড), ২৫০টি সাধারণ বেড থাকবে। সরকার এখন পর্যন্ত মাত্র ৯০০ মতো পরীক্ষা করেছে। এই হাসপাতালের প্রতিদিন ১,০০০ পরীক্ষা করার সক্ষমতা থাকবে। ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু থাকবে।

মোট খরচ হবে প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো। আকিজ গ্রুপ টাকা দিবে, টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা হাসপাতাল চালু করে ফেলতে পারতাম। অনেক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এরই মধ্যে সংগ্রহ করে ফেলেছি। অনেক ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়েছে, কথা চলছে। তারা কাজ করতে চান। এখন তো কাজ বন্ধ হয়ে গেল। স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকজন নিয়ে এসে বাধা দিলেন। কাজ বন্ধ।

বাধা কেন দিলেন?

• তারা যেটা বলছেন, এখানে হাসপাতাল হলে এলাকায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। এটা তো কোনো কথা হলো না। হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা হবে, ছড়িয়ে পড়বে কেন? তবে এলাকার মানুষ যদি সত্যি এমন কিছু মনে করে, বুঝিয়ে বললেই সমস্যার সমাধান হতে পারতো। কিন্তু, মনে হলো হাসপাতাল তৈরি করতে না দেওয়াই মূল উদ্দেশ। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এসে এমন জরুরি একটি হাসপাতালের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলেন। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না।

আপনারা কি সরকারকে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছেন?

• আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সংস্থা জানে। আমরা হাসপাতাল বানাচ্ছি নিজেরা ব্যবসা করার জন্যে নয়। সরকারকে সহায়তা করার জন্যেই এই হাসপাতাল। করোনা প্রস্তুতিতে সরকারের যে দুর্বলতা, তা দূর হবে এই হাসপাতালটি চালু হলে। সরকারের উচিত ছিল এটাকে সর্বোতভাবে সহায়তা করা। দলের লোকজন এসে কাজ বন্ধ করে দিলো। হাসপাতাল না হলে কার ক্ষতি হবে?

আকিজ গ্রুপ যে মহৎ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এলো তা যদি আমরা কাজে লাগাতে না পারি, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।

আকিজ একটি দেশের প্রতিষ্ঠান। শেখ বশির উদ্দিন অত্যন্ত সজ্জন মানুষ। ব্যবসা করে তারা অর্থ আয় করেছেন। বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেশের এই দুর্দিনে হাসপাতাল বানানোর মতো মানবিক উদ্যোগ নিয়ে তারা কোনো সমস্যায় পড়ুক, তা চাই না।

এত আশা জাগানো একটি হাসপাতাল তৈরি হবে না?

• সরকার যদি না চায়, তাহলে তো হবে না। তবে আমরা চাই হাসপাতালটি তৈরি হোক। যদি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় সমস্যা হয়ে থাকে, তবে আমরা থাকবো না। সরকার নিজে করতে চাইলে করুক। অন্যরা করতে চাইলে করুক। হাসপাতালটি তৈরি হোক, চালু হোক। আমরা যে কোনো রকম সহায়তা করতে রাজি আছি। আমাদের নামের দরকার নেই।

আমাদেরকে যদি সরকার এখনো সহায়তা করে, যারা বাধা দিচ্ছেন তাদের যদি নিবৃত করে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩০১ শয্যার করোনা চিকিৎসার এই বিশেষ হাসপাতালটি চালু হতে পারে। দেশের জন্যে যা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। এখন সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী চায়?

[email protected]

 

আরও পড়ুন:

কথার প্রস্তুতিতে করুণা করবে না করোনা

মুক্তিযুদ্ধ, গণস্বাস্থ্য, ডা. জাফরুল্লাহ ও মাছ চোর

সরকারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

ড. বিজনের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ৩৫০ টাকায় ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত সম্ভব

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago