‘অনেক বড় বড় দেশেও এতোগুলো ভেন্টিলেটর থাকে না’
দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানাতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিদেশ থেকে এরই মধ্যে আড়াইশ ভেন্টিলেটর মেশিন দেশে এসেছে। এছাড়া আরও সাড়ে তিনশ ভেন্টিলেটর আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অনেক বড় বড় দেশেও এতোগুলো ভেন্টিলেটর থাকে না।
আজ রোববার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য তুলে ধরা হলো:
‘করোনা ভাইরাস নিয়ে ইদানিং আমরা টেলিভিশন,পত্রপত্রিকায় অনেক কিছু দেখতে পাই, শুনতে পাই। আমরা জানাতে চাইছি যে, অনেক সময় অনেকে এ কথা বলে থাকেন যে প্রস্তুতি ছিল না। আমরা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি, যখন থেকে চীনে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ হয়েছে। আমরা এয়ারপোর্ট স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা চারটি কমিটি তৈরি করি। একটা ন্যাশনাল কমিটি। আমরা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটি তৈরি করি। যে কমিটির মাধ্যমে এখন সমস্ত কাজ পরিচালনা চলছে। আমরা কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করি। আমরা ট্রিটমেন্ট প্রটোকল তৈরি করি। আমরা ডাক্তার নার্সদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করি। জেলায় হাসপাতালের ব্যবস্থা করি। ঢাকা বিভাগে তিন হাজার শয্যার ব্যবস্থা করেছি। যার মধ্যে কুর্মিটোলা হাসপাতাল রয়েছে। গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল আমরা টার্গেট করে রেখেছি। আমাদের এখানে আরেকটি কথাও হয়েছে যে ল্যাব, টেস্টিং স্থাপন করেছি। সেখানে টেস্টিং এর ব্যবস্থা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর কিছু আগামী তিন চারদিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে। যেগুলো শুরু হয়েছে আইইডিসিআর তো আছেই, আইপিএস আছে, শিশু হাসপাতাল, ঢাকা সিএমএইচ হচ্ছে, চট্টগ্রাম হচ্ছে, কক্সবাজার হচ্ছে।
এটা বলতে চাই, কক্সবাজারে আমরা শুরু করার পর এ পর্যন্ত কোনো রোগী পাইনি। চট্টগ্রামে গত ৫-৬ দিনে মাত্র ৫-৭ জনের বেশি কেউ এখন টেস্ট করার জন্য আসেনি। কিটসের বিষয়ে অনেক রকমের কথাবার্তা আমাদের কানে এসেছে। আমাদের এ পর্যন্ত কিটস হাতে আছে ৪৫ হাজার প্রায়। এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করতে পারছি। আরেকটি কথা উঠেছে যে পিপিই আছে কিনা। আমরা প্রায় তিন লাখ পিপিই বিতরণ করেছি বিভিন্ন হাসপাতালে। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার পিপিই আমরা পাচ্ছি। সেগুলোও বিতরণ করা হচ্ছে। ইম্পোর্টের জন্য আমাদের অর্ডার দেওয়া আছে। এপ্রিলের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সবগুলোই চলে আসবে। প্রায় পাঁচ লাখ পিসের মতো। কাজেই আমি মনে করি পিপিই নিয়েও শঙ্কা প্রকাশের প্রয়োজন নেই। আমরা গতকালকে ডাব্লিউএইচওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। ডাব্লিউএইচও কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। ডাব্লিউএইচওর সঙ্গে আরও ১০টি দেশ ছিল। তারা সন্তোষ জানিয়েছে। জাতিসংঘও সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সন্তুষ্টি জানিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদিনই আমাদের কথা হয়। উনি আমাদেরকে নির্দেশনা দেন। তিনিও সন্তুষ্টি জানিয়েছেন।
আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমাদের হাতে ২৫০ ভেন্টিলেটর চলে এসেছে। এগুলো আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে স্থাপন করেছি। আমাদের ইম্পোর্টেও প্রায় সাড়ে তিনশ ভেন্টিলেটর আছে। অনেক বড় বড় দেশেও এতোগুলো ভেন্টিলেটর থাকে না। আমরা অনেক আগে প্রস্তুতি নিয়েছি বলেই বাংলাদেশ ভালো আছে। ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থা কীরকম সেটা আপনারা জানেন। ওই বিষয়ে আমি আর বিস্তারিত আলাপ করছি না। অনেকে বলছে আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এতো কম কেন? সংখ্যা বেশি থাকলে কি আমরা খুশি হই? আমরা কি চাই বেশি বেশি লোক সংক্রমিত হোক আর বেশি বেশি লোক মৃত্যুবরণ করুক?
আমরা তো চাই আমাদের দেশের লোক সংক্রমিত না হোক। আমাদের দেশের লোক মৃত্যুবরণ না করুক। এটিই সবচেয়ে বড় বিষয়। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি আগে থেকে প্রস্তুতি নিতো তাহলে দেশের এ অবস্থা হতো না। যত মানুষ বিদেশ থেকে এসেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। ফ্লাইট কমানোর ব্যাপারে তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা নেই। যারা এখনো আসছেন, আজকেও এসেছেন সেটা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারে। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘আমাদের এই অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়ী।’
এখন ব্যবসায়ীদেরকে বুঝতে হবে যে, ইউরোপ আমেরিকা থেকে অর্ডার ক্যান্সেল হয়েছে সেটা তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফেরাতে পারবে না। তাদের করোনাভাইরাস তো আর আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফেরাতে পারবে না। কাজেই এই কথাগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত।
অনেক টিভি চ্যানেল বলছে, আমাদের মাত্র ২৯টি ভেন্টিলেটর আছে। এটা সঠিক নয়। আমাদের হাতে প্রায় ৫০০ এর কাছাকাছি ভেন্টিলেটর আছে। আরও ৩৫০ আসছে। কাজেই আমি মনে করি, বিভ্রান্তিকর কোনো খবর পরিবেশন করা উচিত না।
এখন আমাদের কাজ হলো সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করা। যেটা আমরা এখন করছি। আমাদের সঙ্গে দেশবাসী আছে। আমার পরামর্শ এটাই যে আপনারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মগুলো পালন করুন।
সভা সমাবেশ করবেন না, কোয়ারেন্টিন মেনে চলুন। দরজা, জানালা ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত না। আমরা এটাও মনে করি যে, ব্যক্তিগত শিষ্টাচার বজায় রাখা, দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি কাশির সময় মুখে রুমাল দেওয়া, অসুস্থ হলে টেলিফোনে যোগাযোগ করা এগুলো জরুরি। সর্দি কাশি হলেই যে করোনা হয়ে গেল সেরকম কিছু না।
আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত উন্নতি করে যাচ্ছি। দুমাস আগে কেউ বলে নি যে আমাদের কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে কিংবা করোনা ভাইরাস আসলে কী কী করতে হবে। এটা তো আমাদের নিজেদের উদ্যোগে আমরা করেছি। আমাদের উদ্যোগ কাজে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন যেটা আমরা অনুসরণ করেছি।
এখন আমরা ভালো আছি। ইনশাল্লাহ সবাই নিয়ম কানুন মেনে চললে আমরা ভালো থাকবো, ভালো থাকতে চাই। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ এখন অনেক ভালো আছে। কাজেই ভালোটা আমরা রাখতে চাই। এ ব্যাপারে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। সবাইকে ধন্যবাদ।
সাধারণ ছুটি শেষ হবার পর আমরা পর্যবেক্ষণ করবো, আপনারা করবেন, দেশবাসী করবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করবেন। যদি ১০ দিনে আমাদের দেশের এবং বিশ্বের পরিস্থিতি সহনশীল অবস্থায় চলে আসে তখন এক ধরনের চিন্তা হবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলবো। উনি যদি ছুটি বাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে বিচার বিবেচনা করে উনি সে সিদ্ধান্ত দেবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আমরা যেভাবে ট্রেনে, বাসে ভিড় করেছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে আমি বলতে চাই এটা সংক্রমণের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। তাই ঢাকায় ফিরে আসার সময় দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে।’
Comments