আজকের এই দিনে

অবিশ্বাস্য ব্রায়ান লারা, অতিমানবীয় ১৫৩!

২১ বছর আগে আজকের এই দিনে বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছিল ত্রিনিদাদের বরপুত্রের অবিশ্বাস্য ১৫৩ রানের ইনিংস।
Brain Lara
ফাইল ছবি: সংগ্রহ

পঞ্চম দিনের উইকেট। তিনশর বেশি রান তাড়া করে জেতার চাপ। তার উপর ১০৫ রানেই অর্ধেক উইকেট খতম। আড়াইশ ছোঁয়ার আগে নেই ৮ উইকেট। কিন্তু এরপর গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পির গোলা কিংবা শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের ঘূর্ণি কিছুই কাজে লাগল না। ঘুরে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত গল্প লিখে বল হাওয়ায় উড়িয়ে, মাটিতে আছড়ে ক্লাসিক্যাল নৃত্যের ভঙ্গিতে গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে মোহাবিষ্ট করছিলেন ব্রায়ান লারা। ২১ বছর আগে আজকের এই দিনে (৩০ মার্চ) বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছিল ত্রিনিদাদের বরপুত্রের অবিশ্বাস্য ১৫৩ রানের ইনিংস।

প্রথম শ্রেণিতে ৫০০ রানের বিশ্বরেকর্ড আছে লারার, আছে টেস্টে ৪০০, তারও আগে সাদা পোশাকে আছে ৩৭৫। এসব ইনিংসের পরিসংখ্যানই চোখ বড় বড় করে দেখার মতো। কম যায় না সিডনিতে এই অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষেই ২৭৭ কিংবা একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কিংস্টনে ২১৩ রান।

সে তুলনায় ১৫৩, ভাবতে পারেন এ আর এমন কি! কিন্তু যদি জানা থাকে পরিস্থিতি আর প্রেক্ষাপট, তাহলে বোঝা যাবে এর মাহাত্ম্য। যদি জানা যায়, দ্বিতীয় ইনিংসে দুদলের কেউই ৪০ পর্যন্তও যেতে পারেননি, তাহলে হয়তো আঁচ করা যাবে উইকেটের অবস্থা, বোঝা যাবে কী করেছিলেন লারা।

ব্রিজটাউনে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৯০ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই ইনিংসেই অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ ১৯৯ রানে আউট হওয়ার আক্ষেপে পুড়েছিলেন। রিকি পন্টিংও করেছিলেন সেঞ্চুরি।

জবাবে শেরউইন ক্যাম্পবেলের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৩২৯ রান করতে পারে ক্যারিবিয়ানরা। সময় গড়াতে গড়াতে বদলাতে থাকে উইকেটের ধরন। চতুর্থ দিনে গিয়ে তা যেন হয়ে যায় ভীতিকর!

কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোসের ছোবলে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় অজিদের দ্বিতীয় ইনিংস। তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৬ রান। ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেন ওয়ালশ।

তবে প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১৬১ রানের বড় লিড ম্যাচের পাল্লা হেলে রেখেছিল ওয়াহদের দিকেই। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে তিনশর বেশি তাড়া করা এমনিতেই কঠিন। পঞ্চম দিনের উইকেট বিচার করলে অনেক সময় তা অসম্ভবের কাছাকাছি। এর মধ্যে যদি কোনো দল তিন অঙ্কে যেতেই হারিয়ে বসে টপ অর্ডারে পাঁচ ব্যাটসম্যানকে, তাদের জন্য ম্যাচ জেতার আশা করা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কি!

কিন্তু লারার মতো কেউ থাকলে বোধহয় সেই বাড়াবাড়ির চিন্তাও বেশ সহজ। ৭৮ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে এসেছিলেন, ২ রানে অপরাজিত থেকে শেষ করেছিলেন চতুর্থ দিন। পঞ্চম দিনে নেমেই অ্যাড্রিয়ান গ্রিফিথ আর কার্ল হুপারও গেলেন। বড় হারই তো দেখা যাচ্ছে চোখের সামনে! তখনই ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে জিমি অ্যাডামসকে পাশে রেখে প্রতিরোধ। দুজনে যোগ করলেন ১৩৩ রান, যাতে অ্যাডামসের অবদান কেবল ৩৮।

স্পিনারদের বল জায়গা বের করে লাফ মেরে এগিয়ে এসে উড়িয়ে দেন তো পেসারদের পুল-হুকে করে দেন মাঠ ছাড়া। বুলেট গতির কাভার ড্রাইভে আটকে রাখেন ক্রিকেটভক্তের চোখ। বাইশ গজে লারাকে মনে হচ্ছিল যা ইচ্ছে তা করার মতো সামর্থ্যবান!

লারা একা খেলে গেলে তো আর হচ্ছে না। আরেক প্রান্তে কারও দাঁড়িয়ে থাকা লাগে। ম্যাকগ্রা এসে অ্যাডামসকে বোল্ড করতেই শুরু হয়ে গেল উইকেট পতনের স্রোত। অজি পেসার এরপর ছেঁটে দেন রিডলি জ্যাকবস আর নেহেমিয়াহ প্যারিকেও।

৮ উইকেট পড়ে গেছে। জয় তখনও ৬১ রান দূরে। নবম উইকেটে অ্যামব্রোসের সঙ্গে মহামূল্যবান ৫৪ রানের আরেক জুটি। অ্যামব্রোস কেবল স্ট্রাইক দিয়ে গেছেন। এতে করে তার অবদান শুধু ১২। বাকি সব একা করে যাচ্ছিলেন লারা। রোমাঞ্চের বাকি ছিল তবুও।

অ্যামব্রোস আউট হয়ে গেলেন ৬ রান বাকি থাকতে। বোলিংয়ে যতটা দুর্ধর্ষ, ব্যাটিংয়ে ঠিক ততটা উল্টো ওয়ালশ- এগার নম্বর ব্যাটসম্যান। তার জন্য এক বল টিকে থাকাও অনেক বড় কিছু। ওয়ালশ টিকলেন ৫ বল। পরে বলেছিলেন, এটা তার ক্যারিয়ারেরই সেরা ব্যাটিং! তার দায়িত্ব ছিল আউট না হয়ে লারাকে কাজটা করতে দেওয়া। হলোও তাই। বাউন্ডারি মেরে খেলা শেষ করে লারা যখন দুহাত উঁচিয়ে উল্লাস করছেন, ততক্ষণে বার্বাডোজের মানুষ সবুজ মাঠে নেমে শুরু করেছে আনন্দের কলরোল।

বিস্ময় আর অবিশ্বাস চোখে নিয়ে ভিড় ঠেলে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন স্টিভ ওয়াহ। তার মতো ক্রিকেট বিশ্বকেও যে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন লারা!

Comments

The Daily Star  | English

Banks to freeze accounts of Orion Group chairman, MD, four others

The Bangladesh Financial Intelligence Unit (BFIU) has instructed banks in the country to freeze any accounts owned by Orion Group Chairman Obaidul Karim and its Managing Director Salman Obaidul Karim.

4h ago