পাঁচটি ভেন্টিলেটর পাচ্ছে চট্টগ্রামের হাসপাতাল

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিত্সার জন্য নির্ধারিত তিনটি হাসপাতালের মধ্যে সরকার কেবল একটিতে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাও মাত্র পাঁচটি ভেন্টিলেটর দিয়ে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা রাখা ভীষণভাবে দরকার, কারণ আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শ্বাসকষ্টের কারণে মারা যায়।

হাসপাতালে একটি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের (সিজিএইচ) সুপারিনটেনডেন্ট চিঠি পেয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

তবে চিঠিতে হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, নেগেটিভ এয়ার প্রেসার মেশিন, সাকার মেশিন এবং আইসিইউ পরিচালনার জন্য যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং নার্সসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধাগুলি কখন পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি বলে ওই সূত্রটি জানায়।

পুরো বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য ঢাকার একটি বিশেষজ্ঞ দল শিগগির হাসপাতালে আসবেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম সম্ভাব্য কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিত্সার জন্য সরকার তিনটি হাসপাতাল নির্বাচন করেছে। এর মধ্যে সিজিএইচে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনটি হাসপাতালের কোনোটিরই আইসিইউ সুবিধা না থাকায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য গঠিত চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিটি বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি হাসপাতাল [যার ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে] বেছে নেয়।

সিজিএইচ সুপারিনটেনডেন্ট ডা. অসীম কুমার নাথ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি যাতে বলা হয়েছে সরকার হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের জন্য আমাদের পাঁচটি ভেন্টিলেটর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কেবল পাঁচটি ভেন্টিলেটর দিয়ে আইসিইউ চালানো সম্ভব নয়, সেখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, নেতিবাচক বায়ু চাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সাকার যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সসহ আরও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন। চিঠিতে এইসব বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।’

বিআইটিআইডির ক্লিনিকাল ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সার জন্য নির্বাচিত হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা রাখতে হবে কারণ এই রোগীদের বেশিরভাগই শ্বাসকষ্টে মারা যায়।

‘যদিও অনেক ক্ষেত্রেই আইসিইউ ছাড়াই কোভিড-১৯ আক্রান্তের চিকিৎসা হয়; কিন্তু যখন রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে, তখন তাকে ভেন্টিলেটর দিয়ে আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়, তাই করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে অবিলম্বে আইসিইউ স্থাপন করা উচিত।’

যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ডা. মাসউদ আহমেদ বলেন, আইসিইউ সাপোর্টযুক্ত একটি হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সার জন্য আদর্শ। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য সময় প্রয়োজন এবং সেক্ষেত্রে সিলিন্ডারের অক্সিজেনর সাহায্যেও একটি আইসিইউ চালানো যেতে পারে।

চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ রোগীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য পাঁচটি ভেন্টিলেটর যথেষ্ট কিনা তা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, কোভিড-১৯ রোগীদের মাত্র এক শতাংশের আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হয়।

‘আমাদের এখনও ৫০ এর কাছাকাছি রোগী রয়েছে... তাই আমি মনে করি, এই মুহূর্তে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে।’

ডা. হাসান বলেন, ‘পাঁচটি ভেন্টিলেটর দিয়ে একটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ স্থাপন করা যেতে পারে।’

আইসিইউ চালানোর জন্য অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধাগুলি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিটটি  পরিচালনার জন্য সমস্ত লজিস্টিক সুবিধা যথাসময়ে দেওয়া হবে।

ইউনিটটি কবে চালু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউনিট স্থাপনে কিছুটা সময় লাগতে পারে। কারণ কিছু অবকাঠামোগত কাজ শেষ করতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago