নিজের সুরক্ষা নিজেকে দিতে হবে, কেউ দিয়ে দেবে না: প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের থেকে নিজের সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রত্যেককে সব নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। যাতে করে কোনোমতে মানুষ সংক্রামিত না হয়। নিজের সুরক্ষা নিজেকে দিতে হবে। কেউ দিয়ে দেবে না। নিজের ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

করোনাভাইরাসের থেকে নিজেদের সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রত্যেককে সব নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। যাতে করে কোনোমতে মানুষ সংক্রামিত না হয়। নিজের সুরক্ষা নিজেকে দিতে হবে। কেউ দিয়ে দেবে না। নিজের ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে।’

‘সেটা যদি কেউ না বোঝে, তার নিজেরই ক্ষতি হবে, পরিবারের ক্ষতি হবে, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর ক্ষতি হবে।’

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।

করোনা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা এই বছরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সব আয়োজন করেছিলাম। মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। স্বাধীনতার মাসে আমাদের অনেক কার্যক্রম থাকে। যে কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। চীনে প্রথম যখন এই সমস্য দেখা দিলো, এ সমস্য দেখা দেওয়ার পরেই আমরা সবথেকে বড় কর্তব্য যেটা মনে করেছি, সেটা হলো আমাদের জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা, জনগণকে রক্ষ করা।’

‘কারণ, আমাদের দেশটা স্বাধীন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। মহান মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে এ দেশের মানুষ যুদ্ধ করে বিজয় এনেছে। সে লাখো শহীদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের মা-বোনেরা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতার জন্য। আমি তাদের কথা স্মরণ করে বলব, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, জনগণকে সম্পৃক্ত করে জাতির পিতা যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেই জনগণের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণে আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত মুজিববর্ষ উদযাপনের সব অনুষ্ঠানে জনসমাগম যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা করেছি। পাশাপাশি মার্চ মাস, ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস, সেই কর্মসূচিগুলোও আমরা স্থগিত করে দিয়েছি। যাতে জনসমাগম না হয়, মানুষ নিরাপদ থাকে, সেই লক্ষ্য নিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘যখন থেকেই আমরা লক্ষ্য করলাম চীনে এটা দেখা দিল, আমরা সেখান থেকে আমাদের কিছু ছাত্রদের ফিরিয়ে নিয়ে আসলাম। জানুয়ারি থেকেই। তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হলো, অর্থাৎ সম্পূর্ণ আলাদাভাবে তাদের রাখা হলো। যেন তাদের মাধ্যমে কেউ সংক্রমিত হতে না পারে। সেই জ্ঞাতার্থে আমরা বাইরে থেকে আমাদের এখানে যেন কেউ সহসা না আসতে পারে, তাই অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যাতে কোনো বিদেশি না আসে, তাদের মাধ্যমে প্রাদুর্ভাব ছড়াতে না পারে, আমাদের দেশের মানুষ যাতে সংক্রামিত না হয়। এর মধ্যেই যারা চলে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে আমরা কিছু পেয়েছিলাম সংক্রমিত। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল, সুনির্দিষ্ট করে ডাক্তার, নার্স, তাদেরকে সে ধরনের সব আয়োজন করেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে ধীরে ধীরে, একসঙ্গে কিছু করিনি, পর্যায়ক্রমিকভাবে আমরা স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করেছি। মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, আমরা যখন দেখলাম দেশে ২০ জনের মতো সংক্রমিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা খারাপ ছিল, যদিও যে পাঁচ জন যারা মারা গেছেন। তাদের মধ্যে সবার বয়সই ৭০ এর বেশি এবং নানা রোগে তারা আক্রান্ত ছিল। তখনই আমরা সবকিছু বন্ধ করে দিলাম, ছুটিও ঘোষণা দিলাম।’

‘তবে ছুটি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, তাদের জীবন-জীবিকা যেন একেবারেই থেমে না যায়, বা আমাদের ওষুধ শিল্প থেকে শুরু করে শিল্প কলকারখানরা সীমিত আকারে চালু থাকে, ব্যবসা-বাণিজ্য বা মানুষের জীবন যাত্রা যাতে সীমিত না হয়, সেজন্য ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে খোলা থাকা, এ ধরনের কিছু ব্যবস্থা আমরা নিলাম। তা ছাড়া, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎ সবকিছু যেন সচল থাকে এবং খাদ্যদ্রব্য বাইরে থেকে আনা-নেওয়া বা পণ্য পরিববহন, সে সুযোগটাও সীমিত আকারে অব্যাহত রেখেছি, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু, সেখানে সবাইকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি যে প্রত্যেককে সব নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। যাতে করে কোনোমতে মানুষ সংক্রামিত না হয়। নিজের সুরক্ষা নিজেকে দিতে হবে। কেউ দিয়ে দেবে না। নিজের ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে। সেটা যদি কেউ না বোঝে, তার নিজেরই ক্ষতি হবে, পরিবারের ক্ষতি হবে, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর ক্ষতি হবে।’

‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা। সেটা আমরা করতে পেরেছি বলেই আজকে প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি হয়ে গেলেও আমরা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখকে পেরেছি।’

‘অনেক উন্নত দেশকে আমরা দেখছি, সেখানে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, সংক্রমিত হচ্ছে, মানুষের দুর্ভোগ দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে’ উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘ভূখণ্ডের দিক থেকে আমরা ছোট, জনসংখ্যার দিক থেকে বিশাল। সেই অবস্থাও আমরা যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। সবাই যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করেছে বলেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। তারপরেও আমি বলব, সমস্যাটা এখনো যায়নি। এটা এখনো বিশ্বব্যাপী রয়েছে। যেহেতু আমরা বিশ্ব থেকে দূরে নই তাই করোনাভাইরাস ঠেকাতে আমাদের আরও সচেতন থাকা দরকার।’

সংক্রমিতদের চিকিৎসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি সংক্রমিত হয়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। ইতোমেধ্য অনেকে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এখনো যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন আমরা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। শুধু ঢাকা নয়, বিভাগীর পর্যায়েও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কেউ যদি সংক্রমিত হয়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। এখানে কোনো লুকোচুরির ব্যাপার নেই। লুকোচুরি করলে নিজেই নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবেন।’

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন থেমে থাকবে না, চলবে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। তারপরও জনগণকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে। সেটা করতে গিয়ে মানুষকে কষ্টও দেওয়া যাবে না।’

আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সেখানে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে কেউ যেনো কোনো অপকর্ম করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। করোনা সংক্রান্ত বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।’

‘ছুটির মধ্যে আমাদের সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে যারা দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ, দরিদ্র যেমন: শ্রমিক, কৃষক, আমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায় যেমন: হিজড়া, বেদে, চা-শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ, প্রতিবন্ধীও আছে, এমন বহু ধরনের লোক আছে। তারা যে জীবন-জীবিকা করে খেত, সে পথটা এখন অনেক সীমিত, বন্ধ হয়ে গেছে বলতে গেলে। তাদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য। তাদের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’

‘ইতিমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, খাদ্যদ্রব্য পাঠিয়েছি। সেখানে সব জেলা প্রশাসনসহ যারা দায়িত্বরত, সবাইকে আমি বলব, আমাদের যেটা নিয়মিত সামাজিক নিরাপত্তামূলক কাজ আছে, সে কাজগুলো যেমন সবাইকে যথাযথভাবে করতে হবে, এর বাইরে এই যে শ্রেণিটা আছে, যারা হয়তো দিন মজুরি করে খেত, দিন এনে দিন খেত, যেমন: ট্রাকচালক, রিকশাচালক অথবা চায়ের দোকানদার বা ছোটখাট কাজ যারা করে দিন শেষে টাকা নিয়ে বাজার করে খেত, এ শ্রেণির লোকেরা কিন্তু এখন কোনো কাজ পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমি বলব, তাদের কাছে আমাদের সাহায্য খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিতে হবে। যাতে পরিবার নিয়ে তারা অভুক্ত না থাকে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago