বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে রবি’র জাপানি অংশীদার ডকোমো

বাংলাদেশের মোবাইল সেবা খাতে মাত্র এক যুগ থাকার পরেই বিনিয়োগ তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে জাপানের বিশ্বখ্যাত মোবাইল ফোন অপারেটর এনটিটি ডকোমো।

বাংলাদেশের মোবাইল সেবা খাতে মাত্র এক যুগ থাকার পরেই বিনিয়োগ তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে জাপানের বিশ্বখ্যাত মোবাইল ফোন অপারেটর এনটিটি ডকোমো।

রবিতে ২০০৮ সালে ৩০ শতাংশ মালিকানা নিয়ে শুরু করেছিল তারা। কিন্তু, দেশের টেলিযোগ নীতি বিনিয়োগবান্ধব নয় বলে দীর্ঘদিন ধরে নতুনবিনিয়োগ বন্ধ রেখেছিল তারা। ফলে এক সময় রবিতে তাদের মালিকানা মাত্র ছয় দশমিক ৩১ শতাংশে এসে ঠেকে।

আর এখন তো বাংলাদেশ ছাড়ারই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে অপারেটরটি। গ্রাহক সংখ্যায় না হলে গ্রাহক সেবার কারণে ডকোমোর বিশ্বখ্যাতি আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডকোমার বাংলাদেশে ছেড়ে যাওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশে টেলিযোযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক।

রবি’র মধ্যেই থাকা অপর আন্তর্জাতিক বিনেয়াগকারী ভারতী (এয়ারটেল) ডকোমার এই ছয় দশমিক ৩১ শতাংশ মালিকানা কিনে নেবে। তবে এর জন্যে তাদের মধ্যে কতো টাকার লেনদেন হবে তার পরিমাণ জানা যায়নি।

সরকারের দিক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে রবি’র নতুন শেয়ার কাঠামো দাঁড়াবে আজিয়াতা গ্রুপের ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ভারতীর ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ। বর্তমানে ভারতীর হাতে ২৫ শতাংশের মালিকানা আছে।

রবি’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনুমোদনের জন্যে আবেদন করা হলে বিটিআরসি সেটি তাদের সুপারিশসহ সরকারের নীতিগত সম্মতির জন্যে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

এক যুগ আগে জরুরি অবস্থার সময় ডকোমো সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলারে তখনকার একটেলের ৩০ শতাংশের মালিকানা কিনেছিলো বাংলাদেশের একে খান অ্যান্ড কোম্পানির কাছ থেকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডকোমো বাংলাদেশের বাজারে আসার পরেই সরকারের টেলিযোগাযোগ নীতিতে অনেকগুলো পরিবর্তন আসে। আর সে কারণে শুরুতেই ধাক্কা খেয়ে যায় তারা।

ডকোমোর বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত থেকে বিনিয়োগে তুলে নেওয়া অবশ্যই এই খাতটির জন্যে চরমতম এক ধাক্কা বলে মনে করেন তারা।

এর আগে ২০১৩ সালে এসে যখন রবিতে থ্রিজি সেবার জন্যে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় তখন আর বিনিয়োগ করতে রাজি হয়নি তারা। তখন বিনিয়োগ না করায় তাদের মালিকানা ৩০ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসে। বাড়তি বিনিয়োগ করার কারণে আজিয়াটার মালিকানা ৭০ শতাংশ থেকে ৯২ শতাংশে উঠে আসে।

পরের দফায় ২০১৬ সালে রবি-এয়ারটেল যখন একীভূত হয় তখন একবার তাদের শেয়ার আরও কমে গিয়ে বর্তমান অবস্থায় চলে আসে। সামনে রবি’র পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার কথা। সেটি হলে তাদের শেয়ার আরও কমে যেতো।

দেশে টেলিযোগাযোগ খাতের অন্যতম বিশ্লেষক আবু সাঈদ খান মনে করেন, ২০১৩ সালে যখন ডকোমো নতুন বিনিয়োগ না করে তাদের মালিকানা কমিয়ে আনে তখনই তারা সরকারকে একটি সংকেত দিয়েছিলেন।

‘তখনই তারা বলে দিয়েছিল সরকারের রেগুলেটরি নীতির কারণেই তারা নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছে না বা তাদের মালিকানা ধরে রাখছে না। আর এখন এমন একটা সময়ে তারা চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে যখন গোটা বিশ্বই চরম অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে,’ বলছিলেন টেলিযোগাযোগ গবেষণা সংস্থা লার্ন এশিয়ার সিনিয়র ফেলো আবু সাঈদ খান।

শুধু ডকোমোর এমন সিদ্ধান্তের কারণেই যে কোনো বিশ্বখ্যাত অপারেটরই এখন বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নতুন করে ভাববে বলে মনে করেন মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স অব বাংলাদেশ বা অ্যামটবের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক।

‘নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের ফাইভজি সেবার ওপরে এটি প্রভাব ফেলবে,’ বলেন সাঈদ।

তবে আবু সাঈদ খানের এমন বিশ্লেষণকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না সরকার।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ খাতের জন্যে বাংলাদেশ খুবই বড় একটি বাজার। আর সে কারণেই বিশ্বখ্যাত অনেকগুলো অপারেটর এখানে ব্যবসা করে। আর বাংলাদেশের মতো এতো অল্প জায়গায় এতো বেশি গ্রাহক তো অপারেটররা আর কোথাও পাবে না।’

রবি ডকোমোর সিদ্ধান্তের খবরটি নিশ্চিত করলেও বাড়তি কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।

‘আমরা বিশ্বাস করি ভারতীর মতো কোম্পানি রবিতে আছে সুতরাং ভবিষ্যৎ নিয়ে গ্রাহকদের শঙ্কার কিছুই নেই, বরং সামনের দিনে রবি-ই বাংলাদেশের ডিজিটাল সংস্কৃতিতে নেতৃত্ব দেবে,’ বলেন রবি’র চিফ রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম।

বর্তমানে বাজারের দ্বিতীয় গ্রাহক সেরা অপারেটর রবিতে চার কোটি ৯৬ লাখ কার্যকর সংযোগ আছে। গত বছর অপারেটরটি ১৭ কোটি টাকার নেট লাভ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

15h ago