করোনাভাইরাস

কুয়াকাটায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মজীবী বেকার

Kuakata unemployment
পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা। ২ এপ্রিল ২০২০। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই অবস্থিত অত্যাধুনিক আবাসিক হোটেল খান প্যালেসে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ম্যানেজার ও হোটেল বয়সহ ৩০ জন কর্মী রয়েছেন। দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের মধ্যে ২০ জনকেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র নিরাপত্তা ও দৈনন্দিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকজনকে কাজে বহাল রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু, হোটেলের সব স্থায়ী কর্মচারীকেই বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এজন্য মালিকপক্ষকে গুনতে হবে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা। এ হোটেলে সাধারণত দৈনিক লাখ টাকা আয় হয়ে থাকলেও বর্তমানে তা হচ্ছে না। হোটেলটির পরিচালক রাসেল খান দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সমুদ্র বাড়ি রিসোর্টের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম মিরন জানান, তাদের ছোট্ট হোটেলের চারজন স্টাফকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে, বেতন গুনতে হবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

ইলিশ পার্কের সত্ত্বাধিকারী রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, তার দুইটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া বাকি ১০ জনকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু, গুনতে হবে তাদের বেতন।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কুয়াকাটায় পর্যটক ভ্রমণে সরকারি নিষোধাজ্ঞার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সেখানকার হোটেলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই দশা কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের মালিক ও কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব শরীফের। তিনি বলেন, ‘২০ জন কর্মীর মধ্যে দুই জন ছাড়া বাকিদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবুও, স্থায়ী সব কর্মীকেই বেতন-ভাতা দিতে হবে। করোনার প্রভাবে এভাবে হোটেল বন্ধ থাকলে কীভাবে বেতন-ভাতা দেবেন তা জানা নেই।’

তিনি জানান, কুয়াকাটার শতাধিক হোটেলে কর্মরত অন্তত দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মুহূর্তে বেকার হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে, এসব হোটেলের স্থায়ী কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হলেও তাদের বেতনের কোটি টাকা গুনতে হবে মালিকদের। মরণঘাতক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও দীর্ঘসময় চললে এ ব্যবসা বন্ধের শঙ্কাও রয়েছে।

এতো গেল শুধু আবাসিক হোটেলের অবস্থার চিত্র। সৈকত এলাকায় অর্ধশত খাবার হোটেলেরও একই অবস্থা। এ ছাড়াও, সৈকতে পেশাগতভাবে যারা ছবি তোলেন, ছাতা-বেঞ্চের ব্যবসা করেন, ফিশ ফ্রাই-চটপটিসহ ক্ষুদে দোকানি, ট্যুরিস্ট বোট মালিকসহ কর্মচারী, ভাড়াটে মোটরসাইকেলচালক, অটোবাইক, ভ্যান, টমটমচালক, বর্তমানে সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

কুয়াকাটায় সাগরের অগভীর এলাকায় মাছ ধরা জেলেদের সংগঠন আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জানান, তাদের নিয়ন্ত্রিত ২ হাজার ৪০০ জেলে সম্পূর্ণভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার নিয়ে এখন তারা মানবেতন দিন যাপন করছেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব শরীফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এভাবে সব মিলিয়ে শুধুমাত্র কুয়াকাটায় কমপক্ষে হোটেল ব্যবসার তিন হাজারসহ মোট সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মজীবী বেকার হয়ে পড়েছেন।’

‘করোনার প্রভাবে বেকার হওয়া এসব কর্মজীবীরা পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছেন,’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তার আশঙ্কা, দ্রুত সময়ে যদি মরণব্যাধি করোনা প্রতিরোধ করা না যায়, কিংবা চলমান অবস্থা বিরাজমান থাকে, তাহলে কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে যারা জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন, এমন সাড়ে পাঁচ হাজারের পাশাপাশি আরও দুই হাজার কর্মজীবী বেকার হয়ে পড়তে পারেন। স্থানীয় অর্থনীতিতে এক ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়ে পারে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসানাত মোহাম্মদ শহীদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকার নিম্ন আয়ের বা গরিবদের সহায়তা কার্যক্রম সবে শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে নিম্ন আয়ের সব মানুষকে আমরা সহায়তার আওতায় নিয়ে আসবো।’

Comments

The Daily Star  | English

Interest payments, subsidies soak up almost half of budget

Interest payments and subsidies have absorbed nearly half of Bangladesh’s total budget expenditure in the first seven months of the current fiscal year, underscoring growing fiscal stress and raising concerns over public finances.

2h ago