অভুক্ত বানরের পাশে মানুষ!
সিলেটের আম্বরখানা এলাকার গোয়াইটুলায় হযরত চাষনী পীর (র) এর মাজার কয়েক শ বানরের আবাসস্থল। শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এখানকার বানরগুলো মাজারে আসা ভক্ত ও পর্যটকদের দেওয়া খাবারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি এবং জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে দর্শনার্থীর ভিড় নেই এ মাজারে। আর এতে চরম খাদ্য সংকটে ভুগছিল মাজারের বাসিন্দা বানরেরা।
এই বিপত্তির সময়ে বানরদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন সিলেটের বেশ কিছু পরিবেশকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সহৃদ অনেকেই। আজ তারা প্রত্যেকেই বানরদের জন্য খাবার নিয়ে আসেন স্বউদ্যোগে।
এছাড়াও বুধবার সিলেটের স্থানীয় এক সাংবাদিকের ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে বানরদের খাদ্য সংকটের কথা জানতে পেরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েকজন ব্যক্তিও নিয়েছেন সাহায্যের উদ্যোগ।
এই প্রাণিপ্রেমীদের সহযোগিতায় অন্তত একমাসের খাবারের যোগান নিশ্চিত হয়েছে। এ থেকে দিনে তিন বেলা বানরদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বানরদের জন্য খাবার নিয়ে যান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, সাংবাদিক মঈন উদ্দিন মঞ্জু, লিটন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুহিবুর রহমান, আজিজ আহমদ সহ আরও বেশ কয়েকজনের পক্ষ থেকেও খাবার নিয়ে আসেন স্থানীয় কয়েকজন।
আশরাফুল কবির বলেন, ‘এখানে শত শত বছর ধরেই বানরদের বসবাস আর নগরায়নের কারণে আশপাশের বনভূমি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় সারা বছরই খাদ্য সংকটে ভুগছে বানররা। আর চলমান পরিস্থিতিতে তাদের এ সংকট চরমে পৌঁছে গিয়েছিল।’
আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘এসব বানর ও রাস্তার কুকুর এখন পুরোপুরি মানুষের ওপর নির্ভরশীল। মানবজীবন যখন বিপর্যস্ত, তখন চরম খাদ্যাভাবে ভুগছে প্রাণীগুলো। কোন একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এদের খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব না। বরং সমাজের সবাইকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু করে হলেও এগিয়ে আসতে হবে।’
স্থানীয় কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ জানান, আপাতত বানরদের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা হলো। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যতদিন আছে, ততদিন বানরদের খাবারের যোগান সকলের সহযোগিতায় অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল (র) এর ৩৬০ আউলিয়ার একজন হযরত চাষনী পীর (র) এর মাজার ও তার তার আশপাশের এলাকায় কয়েক শ বছর আগে বনাঞ্চল ছিল। পরে এখানে চা বাগান এবং তারপর বসতি গড়ে ওঠে।
Comments