লকডাউন গেইট ভেঙে ম্রো পাড়ায় পুলিশের অভিযান, আটক ২

বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ম্রো পাড়ায় লকডাউন গেইট ভেঙে পাড়া প্রধানসহ দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ।

মেরিডিয়ান এগ্রো লিমিটেডের বাগান থেকে গাছ চুরির অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, আজ শুক্রবার সকালে লামা থানার উপপরিদর্শক মো. মাঈনুদ্দিনসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য লাংকুম পাড়ার লকডাউন বেড়া (স্থানীয় ভাষায় খাসুর ) ভেঙে পাড়ায় প্রবেশ করে।

করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার জন্য ২৭ মার্চ পাড়ার লোকজন স্বেচ্ছায় খাসুরটি দিয়েছিল বলে জানান পাড়ার বাসিন্দারা। সেটি ভেঙ্গে পুলিশ গ্রামে ঢুকে পাড়া প্রধান লাংকুম ম্রো (৪৮) ও অপর এক বাসিন্দা রিং রং ম্রো (৫০)-কে আটক করে নিয়ে যায়।

লাংকুম পাড়ার বাসিন্দা প্রেনয় ম্রো বলেন, ‘লকডাউনের সময় কেউ গ্রাম ছেড়ে যায় না, বাইরে থেকেও কাউকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু, দুঃখের বিষয় পুলিশ আজ আমাদের পাড়ার খাসুর ভেঙে পাড়ার দুজন নিরীহ লোককে তুলে নিয়ে গেছে।’

‘লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'মেরিডিয়ান এগ্রো লিমিটেডের বাগান থেকে তারা কিছু আকাশমণি গাছ চুরি করায় আমরা তাদের আটক করেছি।’

লকডাউন বেড়া ভাঙার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই এবং বিশদ জানার জন্য তিনি উপপরিদর্শক মাঈনুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। 

উপপরিদর্শক মাঈনউদ্দিন জানান, ২৯ মার্চ মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো লিমিটেডের একটি বাগান থেকে আকাশমনি গাছ চুরির অভিযোগে আট গ্রামবাসী সহ অজ্ঞাত পাঁচ-ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

গ্রামবাসীর অভিযোগ জুমের জমি দখল করেছে মেরিডিয়ান এগ্রো লিমিটেড। 

যোগাযোগ করা হলে, মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান জুমের জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোনও জুমের জমি দখল করিনি বরং গ্রামবাসীরা আমাদের গাছ চুরি করেছে।

মহামারির মতো দুর্যোগের সময় পাহাড়ে পাড়া বন্ধ প্রথা অনেক পুরনো বলে জানান ম্রো লেখক সিং ইয়ং ম্রো। তিনি বলেন, ‘এই প্রথার মাধ্যমে পাড়ার লোকজন মহামারি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখেন।’

তাদের পূর্বপুরুষেরাও বিভিন্ন মহামারি যেমন, কলেরা, হাম প্রভৃতি দুর্যোগের সময় খাসুর দিয়ে পাড়া বন্ধ করে দিতেন বলে তিনি জানান।

‘পুলিশ কিংবা যে কেউ যদি খাসুর ভেঙ্গে পাড়ায় প্রবেশ করে, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক’, বলেন সিং ইয়ং ম্রো।