পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি ও গ্রেডিং
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চলমান পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পরীক্ষা না নেওয়ার ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের গ্রেড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা ‘ফল সেমিস্টার’র চূড়ান্ত পরীক্ষা নেবে না। এখন পর্যন্ত সম্পন্ন কোর্সের ভিত্তিতে গ্রেডিং দিতে বলা হয়েছে অনুষদ সদস্যদের।
আইইউবি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) শুধুমাত্র এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ‘সামার সেমিস্টার’ এ শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কমপক্ষে আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ফলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ ভর্তি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেমিস্টার ফাইনাল ছাড়াই গ্রেড
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের আদেশ অনুযায়ী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ থাকবে।
শিক্ষকদের দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘স্প্রিং ২০২০ এর আর কোনো ক্লাস (অনলাইনে বা অন্য কোনোভাবে) হবে না। অনুষদ সদস্যদের এখন পর্যন্ত শেষ হওয়া কোর্স ওয়ার্কের ভিত্তিতে গ্রেডিং সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই উদ্বেগপূর্ণ সময়ে কোর্স ওয়ার্ক ও গ্রেডের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতেই সেমিস্টার শেষ করার উপরোক্ত সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। কোনো ফাইনাল হবে না। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে অনুষদ সদস্যদের গ্রেড দেওয়ার সময় পরিস্থিতি অনুধাবন করতে বলা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং দেশের বাইরে থাকায় তার মন্তব্য নেওয়া যায়নি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষকদের একটি অংশ অভিযোগ করছেন, উপাচার্য ভিনসেন্ট চ্যাং একাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেসব শিক্ষার্থী ক্লাস টেস্টে ভালো করতে পারেনি তারা সাধারণত চূড়ান্ত পরীক্ষায় গ্রেড ভালো করার সুযোগ পান। তবে এখন আর সেই সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন এক শিক্ষক।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছে জানিয়ে প্রো-ভিসি তামিম বলেন, ‘আমি মনে করি এখনও সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করার সুযোগ আছে।’
আইইউবি কর্তৃপক্ষ সেমিস্টারের মিডটার্ম, কুইজ, প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্টের উপর ভিত্তি করে কোর্স টিচারদের গ্রেড দিয়ে দিতে বলেছে এবং তা শিক্ষার্থীদের ইমেইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে দিতে বলেছে।
যেসব শিক্ষার্থী নির্ধারিত ফলাফল আরও ভালো করতে চায় তাদেরকে অতিরিক্ত অ্যাসাইনমেন্টের জন্য নিজ নিজ কোর্স অনুষদের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। আইইউবির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, অ্যাসাইনমেন্ট কেমন হবে তা নির্ভর করছে অনুষদ সদস্যের উপর।
তিনি জানান, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কোনো নির্ধারিত নিয়ম নেই।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ফখরুল ইসলাম জানান, বর্তমান পরিস্থিতি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রথমে ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকার এ বন্ধের মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়াবে। যা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে। যদি ২৫ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে স্কুল ও কলেজগুলো রোজা ও ঈদের ছুটি মিলিয়ে বন্ধ থাকবে ৩১ মে পর্যন্ত।
কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেই
আইইউবি কর্তৃপক্ষ ১৮ এপ্রিল হতে যাওয়া সামার সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষা-২ বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি জানান, এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ বা ও-লেভেল ও এ-লেভেলের ফল ও প্রয়োজনে একটি অনলাইন বা ফোনে নেওয়া সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন।
ইউআইইউ এর পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-পরিচালক আবু সাদাত জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি সামার সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করব।’
ইউল্যাবের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (ভর্তি) জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া তাদের আগামী সেমিস্টারে একই পদ্ধতিতে ভর্তি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্প্রিং (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল), সামার (মে থেকে আগস্ট) এবং ফল (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর) সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। প্রতি বছর, সামার সেমিস্টারে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হন।
দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৫টি। এর মধ্যে ৯৭টির অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন আছে।
Comments