নিজেদের সুরক্ষার জন্য পালিয়ে আছেন, তাদের জন্য এই প্রণোদনা নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী যারা করোনা সেবায় অবদান রেখেছেন, তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ, আমি দেখেছি সরকারি হাসপাতালগুলোতে যারা কাজ করেন, তারাই কিন্তু এগিয়ে এসেছেন, তারা কোনো গাফিলতি করেননি। নিজেদের ঝুঁকি জেনেও তারা কাজ করেছেন। সেজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। কারণ, তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে করোনা রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের সেবা প্রদান করছে।’
গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি। (অনলাইন থেকে নেওয়া)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী যারা করোনা সেবায় অবদান রেখেছেন, তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ, আমি দেখেছি সরকারি হাসপাতালগুলোতে যারা কাজ করেন, তারাই কিন্তু এগিয়ে এসেছেন, তারা কোনো গাফিলতি করেননি। নিজেদের ঝুঁকি জেনেও তারা কাজ করেছেন। সেজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। কারণ, তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে করোনা রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের সেবা প্রদান করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করে আপনারা একটা বিরাট অবদান রেখে গেছেন। অর্থাৎ এই করোনার বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, সেই যুদ্ধে সম্মুখভাগে থেকেই আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সঙ্গে আমাদের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মচারীরা যারা কোভিড-১৯’র ব্যাপক সংক্রমণ রোধে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন, আমি আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

আজ মঙ্গলবার সকালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কাজে যারা সবসময় নিয়োজিত ছিলেন, তাদেরকে শুধু খালিমুখে ধন্যবাদ দেবো না। আমি তাদেরকে কিছু পুরস্কৃতও করতে চাই। যেসব সরকারি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন, তাদের তালিকা করার জন্য ইতোমেধ্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। যারা এই ধরনের সাহসী স্বাস্থ্যকর্মী, তাদের উৎসাহ দেওয়া আমাদের প্রয়োজন। উৎসাহের সাথে সাথে আমি বিশেষ একটা সম্মানীও দিতে চাই। সেজন্য ইতোমধ্যে আমি তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি এবং তালিকা প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য আমরা একটা বিশেষ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করে দেবো। সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে অর্থসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে।

‘সেই সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী কেউ যদি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন, তার চিকিৎসার জন্য সব খরচ সরকার নেবে। তাদের জন্য একটা স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা আমরা করে দেবো। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্য পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫-১০ লাখ টাকার একটা স্বাস্থ্যবিমা করে দেবো। কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে তাদের জন্য এই বিমাটা আমরা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করে দেবো। এটা তাদের জন্যই করবো, যারা করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে কাজ করেছেন। অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে এটা শুরু, বলতে গেলে মার্চ মাস থেকেই এটা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়, এই মার্চে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, এই প্রণোদনা তাদের জন্য,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা কাজ করেন নাই, যারা নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য পালিয়ে আছেন, সেখানে রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পায়নি। অন্য সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা পায়নি। তাদের জন্য এই প্রণোদনা নয়। তারা এটা পাবেন না। কেউ যদি মনে করেন, আমাদের এটা দিলে আমরা আসবো, আমি বলবো, সেটা দিতে হলে, আগামীতে কীভাবে কাজ করেন, আগামী এই যে দুঃসময়টা যাবে, আমরা অবজারভেশনে রাখবো, অন্তত তিন মাস তাদের অবজারভেশনে রাখবো, সেখানেই দেখবো। যদি কেউ সত্যি এভাবে মানুষের সেবা দেন, তার পরে তাদের কথা আমরা চিন্তা করবো। কিন্তু, শর্ত দিয়ে কাউকে আমি কাজে আনবো না।’

‘কারণ যাদের মধ্যে এই মানবতাবোধটুকু নেই, তাদের প্রণোদনা দিয়ে আনার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করিনা। যদি বাংলাদেশে সেরকম দুর্দিন আসে, প্রয়োজনে  বাইরের থেকে আমরা ডাক্তার নিয়ে আসবো, নার্স নিয়ে আসবো। কিন্তু, এই ধরনের দুর্বল মানসিকতা দিয়ে আমাদের কাজ হবে না। এটা হলো বাস্তবতা। এই শর্তে আমার কোনো কিছু আসেনা। বরং তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবে কি না, সেটাই চিন্তা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার আমাদের প্রয়োজন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু, এ মানসিকতা থাকবে কেন? মানবতাবোধ হারাবে কেন? একটা রোগী আসছে চিকিৎসা করতে হবে, তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। অ্যাপ্রোন পরে নেন, মুখে মাস্ক লাগান, হাতে গ্লাভস পরেন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন হাত ধোন, রোগী দেখেন। রোগী কেন ফেরত যাবে? আর একজন রোগী নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে সে রোগী কেন মারা যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রও কেন মারা যাবে? এই রোগী যেখানে যেখানে গিয়েছে, সেখানে কোন কোন ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল, আমি তাদের নামটাও জানতে চাই। ডাক্তারি করার মতো কিংবা চাকরি করার মতো সক্ষমতা তাদের নাই। তাদের বের করে দেওয়া উচিত চাকরি থেকে। এটা আমি মনে করি।’

‘আমরা জানি এটা একটা আতঙ্ক সারা দেশে, বিশ্বে। সবাই ভয় পাবে, সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে, এটা সত্যি, এটা মানি আমি। কিন্তু, একজন ডাক্তার তার একটা দায়িত্ব থাকে। তাদের সুরক্ষার জন্য যা যা দরকার আমরা তো দিয়ে যাচ্ছি। ব্যবস্থা করে যাাচ্ছি। লাগলে আমরা আরও করবো, সেক্ষেত্রে আমরা কোনো কার্পণ্য করছি না।  আমরা দেশে তৈরি করছি, বিদেশ থেকে নিয়ে আসছি। যখন যা দরকার আমরা সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছি’, যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago