খাদ্য সংকটে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষেরা

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম কাপ্রু পাড়ায় বুনো আলু খেয়ে দিন পার করছে ম্রো পরিবার। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম কাপ্রু পাড়ার পেক্রু ম্রো ও তার পরিবার গত কিছুদিন ধরে বাড়িতে খাবার না থাকায় বুনো আলু খেয়ে বেঁচে আছেন।

কেবল পেক্রুর পরিবারই নয়, কাপ্রু পাড়ার ৫০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩০টি পরিবারের ঘরে খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় মারাত্মক সঙ্কটের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানান, কাপ্রু পাড়া প্রধান (স্থানীয় ভাষায় কারবারি) ইন চং ম্রো।

‘করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য আমাদের পাড়াতে খাসুর (বাঁশের গেট) দিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে আমরা স্বেচ্ছায় পাড়া বন্ধ (লকডাউন) করে রেখেছি’, বলেন তিনি।

তিনি বলেন ‘পাড়া বন্ধের পর থেকে প্রথা অনুযায়ী পাড়াবাসীরা বাইরে যান না, ফলে সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের সহায়তা করতে আসেনি।’

কেবল কাপ্রু ম্রো পাড়াই নয়, জেলার লামা, থানচি, আলীকদম, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত অনেক পাড়ায় করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া পাহাড়িরা খাদ্য সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাম প্রধানরা।

‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনও সরকারি সহায়তা পাইনি। পাড়া বন্ধের কারণে গ্রামবাসীরা বাইরে যেতে না পারায় মারাত্মক খাবার সঙ্কটে আছি আমরা’, বলেন চম্পা ঝিরি ম্রো পাড়ার পাড়া প্রধান লং থয় ম্রো।

‘আমার মৌজায় প্রায় তিন শতাধিক পরিবার রয়েছে যেখানে বেশিরভাগ পরিবার খাদ্য সংকটে ভুগছেন,’ বলেন থানচির সেকদু মৌজার হেডম্যান বা থোয়াই চিং মারমা।

সেকদু মৌজার সবচেয়ে বেশি খাদ্য সংকটে থাকা পাড়াগুলো হলো থং নাং খুমি পাড়া, সতি চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া, জনিরাং পাড়া এবং হাস্তুরাং পাড়া, বলেন তিনি।

দুর্গম পাড়ার ম্রো, খুমি, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের অনেক পরিবার মারাত্মক খাদ্য সঙ্কটে আছে বলে জানান মৌজা প্রধানরা।

‘আমাদের ঘরে খাবার নেই। আমরা জঙ্গলের আলু খেয়ে কিংবা কখনও অনাহারে থেকে জীবন ধারণ করছি’, বলেন পেক্রু ম্রো।

'বেঁচে থাকার জন্য আমাদের ঘরে কোনও খাবার নেই', বলেন কাপ্রু পাড়ার আর এক বাসিন্দা কাইতুম ম্রো।

থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত তিন্দু, রেমাক্রি, বড় মদক এবং ছোট মদকের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি কোন কর্মকর্তা সাহায্য নিয়ে তাদের এলাকায় এখনও যাননি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, যোগাযোগের দুর্গমতায় সরকারি কিংবা বেসরকারি অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে তারা বঞ্চিত।

দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা খাদ্যের জন্য জুম ফসলের ওপর নির্ভর করে তবে বেশিরভাগ পরিবার বছরের পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় এপ্রিল থেকে তাদের খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হয় বলে গ্রামবাসীরা জানান।

যোগাযোগ করা হলে, বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শামীম হোসেন বলেন, 'সারাদেশে লকডাউনের পর থেকে আমরা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ (বিএইচডিসি) সহ বান্দরবানে প্রায় ৩০,০০০ পরিবারের কাছে ইতিমধ্যে ৩৪৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছি।'

তিনি বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকদের কাছে পৌঁছানো সত্যিই কঠিন। আমরা কীভাবে তাদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পারি তার জন্য একটা পরিকল্পনা করছি।’

 

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

5h ago