ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত সংকটের সম্ভাবনা
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্তদান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এতে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে প্রয়োজনের সময় অনেক রোগীর রক্ত না পাওয়ার ব্যাপারে।
আর কিছুদিন পরই আসছে রমজান। রমজানের সময় এমনিতেই রক্তদানের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। তারপর এই বন্ধ আরও দীর্ঘ হলে থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সারসহ যেসব রোগীদের নিয়মিত ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয় তাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সংগঠনগুলো অনুরোধ জানায়, রক্তদানের সামর্থ্য যাদের আছে তারা যেন রক্ত দেন।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে ১০ থেকে ১১ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের হাসপাতাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শেখ দাউদ আদনান গতকাল মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো মোট চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ রক্ত সরবরাহ করে এবং বাকিগুলো আসে সরাসরি রক্তদাতাদের মাধ্যমে।’
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, বাঁধন ও পুলিশ ব্লাড ব্যাংকসহ শীর্ষস্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
চলতি বছর মার্চে রেড ক্রিসেন্ট ৭৪৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছিল। গত বছর একই সময়ে তাদের সংগ্রহে ছিল দুই হাজার ৫২৭ ব্যাগ রক্ত। মার্চে সংগঠনটি এক হাজার ১৭০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে, যেখানে গত বছর মার্চে তাদের মোট সরবরাহ ছিল তিন হাজার ৫৩৬ ব্যাগ রক্ত।
স্বাধীনতা দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে রেড ক্রিসেন্ট সাধারণত মার্চ মাসে বেশি ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে। রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক (রক্তদান কর্মসূচী) তারেক হোসেন জানান, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে এ বছর রক্তদানের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
গত রোববার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে রক্ত সংগ্রহ ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহও অনেক কমে গেছে। অনেক থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, কিডনি এবং জরুরী অবস্থার রোগী আমাদের নিয়মিত রক্ত সরবরাহের উপর নির্ভর করে। রক্তের এই অভাব তাদের জীবনকে বিপদে ফেলতে পারে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে (রোগীদের জন্য) রক্ত পাওয়া একটি বড় সমস্যা হবে।’
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান সংগঠন বাঁধনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরে রক্তের সংগ্রহ ৮০ শতাংশ কমেছে।
বাঁধনের সাধারণ সম্পাদক জোহাহিদ চাকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলাগুলোতে আমাদের কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে। আমরা রক্তদাতাদের কাছে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তবুও, রক্ত সংগ্রহ কমে ২০ শতাংশে এসে ঠেকেছে।’
তিনি জানান, ৫৩টি জেলার ৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৩৬টি ইউনিটের মাধ্যমে বাঁধন গত বছর প্রায় ৫৯ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছিল।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান কর্মসূচির সমন্বয়ক মনিরুজ্জামান জানান, তারা জানুয়ারিতে পাঁচ হাজার ৫৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছিলেন। যা কমতে কমতে ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ২২৯ এবং মার্চে চার হাজার ১৯৫ ব্যাগে।
পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুমাসে মাত্র ৮০০ থেকে ৯০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে পেরেছি। গত বছর এ সময় রক্তের সংগ্রহ ছিল দুই হাজার ব্যাগ।’
সন্ধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইহসানুল করিম তানজিম বলেন, ‘আমাদের ইউনিট থেকে প্রতি মাসে ৫৫০ থেকে ৬০০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করতাম। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে রক্তদাতাদের অভাবের কারণে এই সংগ্রহ ২০০ থেকে ২৫০ ব্যাগে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন রক্তদাতা খুঁজে পাওয়াই আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।’
Comments