আমেরিকায় চাকরির সঙ্গে ভিসা হারিয়ে বিপাকে চীনা নাগরিকরা

করোনার সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করছেন মার্কিন নাগরিকরা। ছবি: রয়টার্স

করোনা মহামারিতে চরমভাবে ভুগছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত আমেরিকা। দেশটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এতেই বিপাকে পড়েছেন চীনের নাগরিকরা। চাকরির সঙ্গে সঙ্গে হারাচ্ছেন ভিসাও। শুধু তাই নয়, ফ্লাইট না থাকায় ফিরে যেতে পারছেন না নিজ দেশে।

এইচ১-বি ভিসা নিয়ে আমেরিকায় কর্মরত চীনা নাগরিক তাং চেনের কথা উল্লেখ করে আজ বৃহস্পতিবার সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন সফটওয়ার ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত তাংয়ের আর কয়েকদিন পরেই গ্রিন কার্ড পেয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ, তিনি আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়ে যেতেন। কিন্তু, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তাকে হারাতে হয়েছে চাকরি। গ্রিন কার্ডের জন্য তাকে এখন সহযোগিতাও করতে পারছে না তার প্রতিষ্ঠান।

এই মহামারির সময় সবাই যখন চাকরি হারাচ্ছেন, সেখানে নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। চীনে ফিরে যাওয়ার জন্য সরাসরি ফ্লাইটও নেই। সব মিলিয়ে বেশ বিপদে আছেন তাংয়ের মতো চাকরি হারানো চীনের নাগরিকরা।

এইচ১-বি ভিসার শর্ত হচ্ছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেই হবে। কাজ হারানোর ৬০ দিনের মধ্যে ভ্রমণকারী বা শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের স্ট্যাটাস বদলাতে হবে, না হয় অন্য কোথাও কাজ খুঁজে নিতে হবে। এর কোনোটিই সম্ভব না হলে আপনা-আপনিই ৬০ দিন পর বাতিল হয়ে যাবে ভিসা। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১৮০ দিনের বেশি আমেরিকায় অবস্থান করলে তাকে ভবিষ্যতে আর কখনও আমেরিকায় প্রবেশের অনুমতি নাও দেওয়া হতে পারে।

তাংয়ের মতো ঠিক কতজন চাকরি হারিয়ে এমন বিপাকে আছেন তার সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করতে না পারলেও সিএনএন জানিয়েছে, দুটি উইচ্যাট গ্রুপে এমন অন্তত কয়েকশ চীনা নাগরিক নিজেদের করুণ দশার কথা উল্লেখ করেছেন। এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

এই চীনা নাগরিকরা অন্য কোথাও কাজ না পেলে কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেলে দীর্ঘ মেয়াদে আমেরিকায় থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আবার ফ্লাইট বন্ধ থাকায় তারা নিজ দেশেও ফিরে যেতে পারছেন না।

নিউইয়র্কে ইমিগ্রেশন আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন ইয়াং চাও। তার কাছে সহযোগিতা নিতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই চীনা নাগরিক। তিনি চীনা নাগরিকদের পরামর্শ দিচ্ছেন ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ভ্রমণকারী কিংবা শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন করতে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কথা উল্লেখ করে চাও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি ২০০৮ এর থেকেও খারাপ।’

আমেরিকায় চাকরির বাজারের অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পরেছে। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে এক কোটিরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার হিসেবে প্রাপ্ত সুবিধার জন্য আবেদন করেছে।

গত পাঁচ বছরে আমেরিকা এইচ১-বি ভিসা দিয়েছে মোট নয় লাখ। তিন বছর মেয়াদী এই ভিসার মেয়াদ শর্ত সাপেক্ষে পরবর্তী তিন বছরের জন্য বাড়ানো যায়। আমেরিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যত এইচ১-বি ভিসা দেওয়া হয়েছে তার ১৫ শতাংশ চীনা নাগরিক।

অপর চীনা শিক্ষার্থী ওয়ালটন ওয়াংয়ের ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে। নিউইয়র্কের একটি কসমেটিক্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ইন্টার্ন ওয়াং সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছে। দেশের ফেরার কোনো ফ্লাইট না পেয়ে তিনি বলেন, ‘চীনে ফেরার কোনো উপায় নেই, এখানেও বেশি দিন থাকতে পারব না। এখন আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

Israel launches major attack on Iran: what we know so far

‘Nuclear plant, military sites’ hit; strikes likely killed Iranian chief of staff, top nuclear scientists; state of emergency declared in Israel, fearing Iranian retaliation

3h ago