জ্বর শ্বাসকষ্টে ছয় জেলায় সাত জনের মৃত্যু
জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে দেশের ছয় জেলা থেকে সাত জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। এসব ক্ষেত্রে মারা যাওয়া ব্যক্তি যে বাড়িতে থাকতেন বা যাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদের এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিনে।
দ্য ডেইলি স্টার এর জেলা প্রতিনিধিরা জানান, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, গাজীপুর ও পাবনায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে যারা কিনা জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
টাঙ্গাইলে দুজনের মৃত্যু
টাঙ্গাইল জেলা শহর এবং সখীপুরে জ্বর-শ্বাসকষ্টে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা শহরের বিশ্বাস বেতকায় মারা যাওয়া ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। বুধবার রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় তিনি মারা যান।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ওই বাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে সখীপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৫৫ বছর বয়সী এক স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন। বুধবার রাতে উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সোবহান জানান, ওই শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা, নিশ্চিত হতে মৃত ব্যক্তির শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে আইইসিডিআরে পাঠানো হয়েছে। ওই বাড়ির সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।
নরসিংদীতে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু
নরসিংদীতে একই উপসর্গ নিয়ে ৩০ বছরের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আলোকবালী পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদীর চরাঞ্চলের বাড়িতে ফেরেন ওই নারী। সকালে নৌকাযোগে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হচ্ছিল। পথেই মারা যান তিনি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেলের প্রধান ইমরুল কায়েস জানান, খবর পেয়ে ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া আশেপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
লালমনিরহাটে কাঠ ব্যবসায়ীর মৃত্যু
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা নিয়ে এক কাঠ ব্যবসায়ী মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাঈম হাসান নয়ন বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা যাচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তারপরও যেহেতু জ্বর ছিল তাই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যবসায়ীর বোন কয়েক দিন আগে ঢাকার ধামরাই এলাকায় মারা যায়। ঢাকা থেকে মরদেহ হাতীবান্ধায় এনে দাফন করেন তারা। গত তিন দিন ধরে উচ্চরক্তচাপসহ জ্বর ছিল ওই ব্যবসায়ীর।
এ ছাড়া ওই উপজেলার টংভাঙ্গা এলাকায় অপর এক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জয়পুরহাটে যুবকের মৃত্যু, ১০ বাড়ি লকডাউন
করোনা সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় এক যুবক মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তার বাড়িসহ আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা জানান, ওই ব্যক্তি গত আট দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত ছিলেন। পরে তার ডায়রিয়া শুরু হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যু হয়।
গাজীপুরে শ্বাসকষ্টে যুবকের মৃত্যু
গাজীপুরের শ্রীপুরে শ্বাসকষ্টে এক যুবক (৩৫) মারা গেছেন। করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসক ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম জানান, ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এরপর, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস জানান, মৃতের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ওই বাড়ির সব লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
পাবনায় নারীর মৃত্যু
পাবনায় সাঁথিয়ায় জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথার উপসর্গ নিয়ে ৫০ বছরের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ধূলাউড়ি মধ্যপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পেশায় ভিক্ষুক ওই নারী বেশ কিছুদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তিন দিন আগে তার নমুনা পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রিপোর্ট না আসায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে কিনা নিশ্চিত বলা সম্ভব নয়।
ওই নারীর বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
Comments