১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে খাবার নেই, চরম দারিদ্র্য বেড়েছে ৬০ শতাংশ: ব্র্যাক

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশে চলমান সাধারণ ছুটির কারণে মানুষকে ঘরে থাকতে হচ্ছে। এর প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষ। ফলে, দেশের চরম দারিদ্র্যের হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে ও ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই।
ত্রাণের দাবিতে নিন্ম আয়ের মানুষের বিক্ষোভ। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশে চলমান সাধারণ ছুটির কারণে মানুষকে ঘরে থাকতে হচ্ছে। এর প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষ। ফলে, দেশের চরম দারিদ্র্যের হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে ও ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পরিচালনায় করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের উপলব্ধি ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে একটি জরিপ চালানো হয়। যাতে দেশের ৬৪ জেলার ২ হাজার ৬৭৫ জন নিন্ম আয়ের মানুষ অংশ নেয়।

গত ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালিত ওই জরিপে ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জ প্রোগ্রাম পরিচালিত জরিপটিতে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করেন ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স, আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং পার্টনারশিপ স্ট্রেংদেনিং ইউনিটের কর্মীরা।

জরিপ অনুযায়ী, এদের ৩৬ শতাংশ জানেন না কীভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হয়। এমনকি করোনাভাইরাসের লক্ষণ (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট) নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে না আসার পরামর্শ দেওয়া হলেও, তা জানেন না অনেকেই।

জরিপে অংশ নেওয়া ৫৩ শতাংশ বলেছেন, প্রতিবেশীর কারো মধ্যে এসব উপসর্গ দেখা দিলে তাকে শহরের হাসপাতাল বা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে। আর মাত্র ২৯ শতাংশ হেল্পলাইনে ফোন করার কথা বলেন।

জরিপে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে-

যেমন: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে টেলিভিশনে প্রচারণা চালাতে হবে। দেশব্যাপী খাদ্য সংকটে পড়া মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সামাজিক দূরত্বের সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। না হলে মানুষ জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হতে বাধ্য হবে।

শহর থেকে অসংখ্য মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন। এসব মানুষ গ্রামের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত নন। তাই তাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বোরো ধান কাটা শুরু হবে এবং শেষ হবে মে মাসের শেষ দিকে। এই সময়ের মধ্যে কোনো কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং সঠিক দাম পান সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সরকার আগাম ধান ক্রয় অভিযান পরিচালনা করতে পারে।

গ্রামের সবজি, দুধ-ডিম-মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিবহন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এগুলোর দাম কমে গেছে। খাদ্যসরবরাহ চেইন স্বাভাবিক করতে বিশেষ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

এছাড়া, সংকট পরবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ও পুনরায় ব্যবসা চালুর অর্থায়নসহ অন্যান্য সহযোগিতার আগাম পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।

জরিপের অন্য উল্লেখযোগ্য বিষয়-

উপার্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব:

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নানা উদ্যোগের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ চরম দরিদ্রে পরিণত হয়েছেন। অর্থাৎ, দরিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে নেমে গেছেন। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পূর্বের আয়ের ভিত্তিতে এদের ২৪ শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে ও ৩৫ শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার ঊর্ধ্বসীমার নিচে। অর্থাৎ, চরম দারিদ্র বর্তমানে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে জরিপে অংশ নেওয়া ২ হাজার ৬৭৫ জনের গড় আয় ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা। এদের ৯৩ শতাংশ জানিয়েছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের আয় কমেছে। মার্চে তাদের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪২ টাকায়। অর্থাৎ তাদের পারিবারিক আয় ৭৫ শতাংশের মতো কমেছে। চট্টগ্রাম (৮৪ শতাংশ), রংপুর (৮১ শতাংশ) এবং সিলেট বিভাগের (৮০ শতাংশ) মানুষের আয় কমেছে।

সাধারণ ছুটির ও সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজশূন্য হয়ে পড়েছেন। ৮ শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও বেতন পাননি। কৃষিকাজে সম্পৃক্তদের (৬৫%) তুলনায় অকৃষিখাতের দিনমজুর বেশি (৭৭%) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

৫১ শতাংশ রিকশাচালক, ৫৮ শতাংশ কারখানা শ্রমিক, ৬২ শতাংশ দিনমজুর, ৬৬ শতাংশ হোটেল/রেস্তোরাঁকর্মী জানান, চলতি মাসে তাদের আয় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

জরিপ অনুযায়ী, ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই। ২৯ শতাংশ মানুষের ঘরে ১ থেকে ৩ দিনের খাবার আছে।

রোগ সচেতনতা:

৯৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষই এই ভাইরাস সম্পর্কে শুনেছেন। এরমধ্যে ৬৬ শতাংশ মানুষ টেলিভিশন থেকে ধারণা পেয়েছেন। কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন হচ্ছে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার সম্ভাব্য উপায় বলে জানান মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ।

করোনা আক্রান্ত হলে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে এ বিষয়ে নারীদের (৩৮ শতাংশ) চেয়ে পুরুষদের (৬০ শতাংশ) ধারণা বেশি। এরমধ্যে আবার ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন সরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা হয় না। আর ৯ শতাংশ মানুষ জানেই না কী করতে হবে।

সরকারের উদ্যোগ:

৬৮ শতাংশ সরকারের সাধারণ ছুটির বিষয়কে সমর্থন করেন, ৭ শতাংশ মানুষ এর বিপক্ষে। সরকারি ছুটি গড়ে ২২ দিন হতে পারে বলে সাধারণের মতামত। ৬৪ শতাংশ মানুষ ১৪ দিনের বেশি ছুটি চান।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট বলে মনে করেন বেশির ৬৪ শতাংশ মানুষ। বাকিদের মধ্যে ৩১ শতাংশ গ্রামের মানুষ এবং ৪০ শতাংশ শহরের মানুষ সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট মনে করেন না। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ জানান তারা জরুরি ত্রাণ পেয়েছেন।

৪৭ শতাংশ মানুষ জানান, এ পরিস্থিতিতে সরকারের খাদ্য সহায়তা জরুরি। তাদের ২০ শতাংশ নগদ অর্থ সহায়তা চান। শহরের মানুষের (৪৪ শতাংশ) চেয়ে গ্রামের মানুষ (৫০ শতাংশ) খাদ্য সহায়তার পক্ষে মত দেন।

করণীয়:

জরিপে অংশ নেওয়া ৩৬ শতাংশ মানুষ জানেন না তারা কীভাবে অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে মানিয়ে নেবেন। ২৩ শতাংশ মানুষ আশাবাদী যে পরিস্থিতি আরও দীর্ঘা হলে সরকার তাদের সহায়তা করবে। শহরের মানুষ গ্রামের মানুষের চেয়ে সরকারি সহায়তার ব্যাপারে বেশি আশাবাদী।

যদি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হয় তাহলে ধার করে চলার চিন্তা করছেন ১৯ শতাংশ মানুষ।

 

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago