শীর্ষ খবর

প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য কঠিন সময়

মধ্যপ্রাচ্য, ইতালি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক মুখোমুখি হচ্ছেন খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতির। করোনাভাইরাস প্রকোপে বন্ধ তাদের আয়ের উৎসও।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল নেটয়ার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন প্রবাসী শ্রমিক। ছবি: এএফপি

মধ্যপ্রাচ্য, ইতালি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক মুখোমুখি হচ্ছেন খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতির। করোনাভাইরাস প্রকোপে বন্ধ তাদের আয়ের উৎসও।

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আছে সৌদি আরব, বাহরাইন, জর্ডান, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনাই ও মালয়েশিয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে বলে জানা যায় দূতাবাসগুলোর অফিস সূত্রে।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ জানান, প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা করার জন্য।

নির্দেশনা অনুসারে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বলে গত বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, সৌদিতে বাংলাদেশি দূতাবাস এই বরাদ্দ থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পেয়েছিল এবং রিয়াদ ও জেদ্দায় বসবাসরত এক হাজার বাংলাদেশির জন্য খাবার প্যাকেজ সরবরাহ করেছে।

গোলাম মসীহ জানান, প্রতিটি প্যাকেজে একজনের ২০ দিন খাওয়ার মত খাদ্য সামগ্রী আছে এবং তারা ধীরে ধীরে অন্যান্য শহরগুলোতেও এই খাদ্য সহযোগিতা প্রসারিত করবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, তারা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দূতাবাসের খাদ্য সহায়তার উদ্যোগ সম্পর্কে একটি নোটিশ প্রচার করেছে। যাদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের ঠিকানাসহ আকামা নম্বর দিতে বলা হয়েছে দূতাবাসে। যাতে করে কর্মকর্তাগণ তাদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে পারে।

গত বুধবার পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৬০০ বাংলাদেশি শ্রমিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ।

তিনি আরও জানিয়েছেন, সৌদি সরকার দূতাবাসকে জানিয়েছে এই মহামারিকালে অনিবন্ধিত শ্রমিকদের সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করবে না।

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসির) বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি গোলাম মসীহ জানান, জর্ডান, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে সহায়তা করার জন্য একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও, এসব দেশে স্থানীয় বাংলাদেশিরা অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো চ্যালেঞ্জ হলেও দূতাবাসগুলো শ্রমিকদের সহায়তা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’

করোনাভাইরাস মহামারি অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালি। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে ভাইরাস সংক্রমণের পরিমাণ বাড়ছে।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পরে, কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে কারফিউ, দেশব্যাপী শাটডাউন, বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা, স্থল সীমানা বন্ধ, ভিসা স্থগিতকরণ এবং ক্রুজ শিপ ভিড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা। কয়েকটি দেশ নাগরিকদের অনাকাঙ্ক্ষিত চলাচল বন্ধ করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

বাংলাদেশও ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বেশকিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

গত বুধবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ পরামর্শদাতা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, অনেক বাংলাদেশি খাদ্যে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং দূতাবাস তাদের ঘরে ঘরে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের চেষ্টা করছে।

মানামায় বাংলাদেশ দূতাবাস দুদিনের মধ্যে প্রায় দেড়শ প্রবাসীর কাছে চাল, মসুর, শাকসবজি, মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করেছে বলে তিনি জানান।

তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, এপ্রিলের মধ্যে বাহরাইনে থাকা প্রায় দুই হাজার থেকে তিন হাজার বাংলাদেশির কাছে খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে পৌঁছে যাবেন বলে আশা করছেন।

রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, তারা প্রায় ৬০০ বাংলাদেশির কাছ থেকে খাদ্য সহায়তার আবেদন পেয়েছে। দূতাবাসটি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে এবং এই অর্থ ব্যয় করে ৬০০ আবেদনকারীকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ গত ৫ এপ্রিল জানান, বর্তমানে বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের খাদ্য ও চিকিত্সাসহ সকল ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে দূতাবাসগুলোর চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

US vetoes Security Council demand for Gaza ceasefire

13 Security Council members voted in favor of a brief draft resolution, put forward by the UAE, while Britain abstained

3h ago