বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ শতাংশ হতে পারে: বিশ্বব্যাংক
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছে বিশ্বব্যাংক।
আজ রোববার বিশ্বব্যাংক ওয়াশিংটন সদরদপ্তর থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের ওপর এ প্রাক্কলন প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের জিডিপি অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরে ছিল ৮.২ শতাংশ।
এই বৈশ্বিক ঋণদান সংস্থার পূর্বাভাসে শুধু এ বছর নয়, আগামী অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়াবে ১.২ থেকে ২.৯ শতাংশ।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে একটু ঘুরে দাঁড়ালেও তা ৪ শতাংশে নিচেই থাকবে।
এ পূর্বাভাস এমন এক সময়ে আসলো যখন বাংলাদেশ ১০ বছরেরও বেশি সময় টানা ৭ শতাংশের প্রবৃদ্ধির কোঠা ছাড়িয়ে ৮ শতাংশের ঘর টপকে দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করেছিল।
তবে সংস্থাটির প্রাক্কলন অনুযায়ী করোনাভাইরাসের ধাক্কায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সাতটি দেশের অর্থনীতিতে বড় রকমের ধস নামতে পারে। এর মধ্যে পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের জিডিপি বাড়বে না বরং সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্রমবর্ধমান মানবিক ক্ষতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিণতির মধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের জনগণ, বিশেষ করে দরিদ্রতম ও হতদরিদ্র মানুষকে রক্ষা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে দক্ষিণ এশিয়ায় আটটি দেশের প্রতিটি দেশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়া, বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে আরও বেশি চাপের কারণে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি।
এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত অবস্থা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস উপস্থাপন করা হয়েছে, ২০২০ সালে আঞ্চলিক বৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে, যা ছয়মাস আগে প্রত্যাশিত ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ৪০ বছরে মধ্যে এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর জন্য অগ্রাধিকার হলো ভাইরাসটি ছড়ানো আটকে দেওয়া এবং তাদের লোকদের রক্ষা করা। বিশেষত, দরিদ্রতম যারা স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শ্যাফার এ কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড -১৯ সংকট এই জরুরি বার্তা দিচ্ছে যে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিগুলোকে সংকট শেষ হওয়ার পর ‘জাম্প স্টার্ট’ শুরু করতে হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে এ যাবৎ কালের অর্জন বিফল হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, এই মহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হবে। বিশেষ করে, পোশাক খাতে তৈরি পণ্যের জন্য জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাস, বেকারত্ব সৃষ্টি ও দারিদ্র্যকে আরও গভীর করে তুলবে।
শহুরে দরিদ্ররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে অতিরিক্ত দরিদ্রের সংখ্যা বেশি হবে। জাতীয় শাটডাউন ব্যক্তিগত ব্যবহারকে প্রভাবিত করবে। মাঝারি মেয়াদে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার হওয়ার আশা করা হলেও, কোভিড-১৯ এর অভ্যন্তরীণ প্রাদুর্ভাব ও আর্থিক খাতের দুর্বলতা থেকে ক্ষতির ঝুঁকি রয়েই যাবে।
‘মহামারির প্রভাবের পরিমাণ সংকটের সময়কাল ও গৃহীত প্রশমন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করবে,’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মের্সি টেম্বন।
‘বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের দিক-নির্দেশনা, উদ্দীপনা প্যাকেজ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত কাজ করেছে। সরকারকে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করার জন্য, এ মাসের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাংক ‘কোভিড -১৯’ প্রাদুর্ভাব শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে ১০ কোটি ডলার অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে।
‘আমরা মহামারি মোকাবেলায় ও পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলে যোগ করেন তিনি।
Comments