করোনা সংকটকালেও চাল চুরি

দেশ যখন করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় যুদ্ধ করতে ব্যস্ত, তখন কিছু জনপ্রতিনিধি ও ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) ব্যবসায়ী অসহায় মানুষ ও ওএমএস প্রকল্পের চাল চুরিতে ব্যস্ত।
সাতক্ষীরার আশাশুনির বড়দল বাজারের একটি গুদাম থেকে ৪২ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করা হয়। ছবি: স্টার

দেশ যখন করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় যুদ্ধ করতে ব্যস্ত, তখন কিছু জনপ্রতিনিধি ও ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) ব্যবসায়ী অসহায় মানুষ ও ওএমএস প্রকল্পের চাল চুরিতে ব্যস্ত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন গত ১২ দিনে ২০টি উপজেলায় চাল চুরির অন্তত ২২টি ঘটনা প্রকাশ করেছে এবং ৫০ কেজির দুই হাজার ৮৩২ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে।

এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনপ্রতিনিধিসহ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জনপ্রতিনিধি ছাড়া বাকীদের বেশিরভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজন।

চলমান সংকটের মধ্যে চাল চুরির এমন ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে।

গতকাল শনিবার বিপুল পরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসব পণ্য রংপুর শহরে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে বিক্রি করার কথা ছিল।

পুলিশ বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৩০টি কার্টন এবং ৫০ কেজির দুই বস্তা চিনি উদ্ধার করেছে।

রংপুর ডিবির ডেপুটি কমিশনার উত্তম প্রসাদ জানান, গতকাল শনিবার দুপুর ১টার দিকে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে টয়লেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য লুকিয়ে রাখায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা কম দামে টিসিবির পণ্য কিনে, সেগুলো গ্রাহকদের কাছে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছিল।

গত শুক্রবার, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এক চাল ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে দশ টাকা দরে বিক্রির ৯০ বস্তা চাল সরিয়ে ফেলার অভিযোগে। এতে মোট চার হাজার ৫০০ কেজি চাল ছিল।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান শাকিল (৪৫) এবং সাইফুল মিয়া (৪০) কেন্দুয়ার আমলোতোলা গ্রামের ভাঙারি ব্যবসায়ী। আমিনুর বোয়াইলবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে।

বগুড়া পুলিশ কয়েক দিন আগে সোনাতোলা উপজেলা থেকে স্থানীয় কৃষক লীগের নেতাকে গ্রেপ্তার করে ৫০ বস্তা চাল সরিয়ে ফেলার অভিযোগে। এই চাল দেওয়া হয়েছিল স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য।

এছাড়াও, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় ১১৫ বস্তা, রংপুরের পীরগঞ্জে ৯০ বস্তা, পাবনার সালথায় ১৪ বস্তা এবং কিশোরগঞ্জের তারাইলে ৮৭ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে।

সারাদেশে এই চুরি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে  সম্পৃক্ত হচ্ছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ত্রাণের জন্য দেওয়া কোনো চাল এখনও চুরি হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ওএমএস এবং ভিজিএফের চালের অপব্যবহার করা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য সকল জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, এ ধরনের জাতীয় সংকটে সহানুভূতি, সংহতি ও জনহিতৈষীমূলক সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলী আশা করা হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় অমানবিক গুণাবলীও সামনে আসছে যা মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না বলে তিনি যোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, চুরি এবং অন্যান্য অনৈতিকতা ও অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই জনপ্রতিনিধি এবং ওএমএস ব্যবসায়ী, যাদের অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব মানুষকে নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

গত ৩১ মার্চ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ত্রাণ বিতরণে তিনি কোনো দুর্নীতি সহ্য করবেন না।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

9h ago