করোনায় পাহাড়ে মলিন বিজু উৎসব
প্রতি বছর এই সময় আঁকাবাঁকা সবুজ পাহাড়ি জনপদ উৎসবে মুখর থাকে। কিন্তু এ বছর করোনার আগ্রাসী প্রভাবের কারণে পাহাড়ে উচ্ছ্বাস নেই, নেই মুখরতা। তবু ঐতিহ্যবাহী সামাজিক রীতিনীতি পালনে আজ থেকে শুরু হচ্ছে পার্বত্য এলাকার প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, বিষু, বিহু, সাংক্রান।
প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলা বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে উৎসবটি পালন করা হয়। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবে আজ রোববার উদযাপন করা হচ্ছে ফুলবিজু। আগামীকাল মূলবিজু ও মঙ্গলবার গোজ্যেপোজ্যে দিন উদযাপন করা হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা যেন সবাই নিজ নিজ ঘরে থেকে এই উৎসব পালন করেন।
এই উৎসব চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, তনচংগ্যারা বিষু এবং ত্রিপুরারা বৈসুক নামে পালন করে। উৎসবের প্রথম দিন চাকমারা ফুলবিজু, মারমারা পাইংছোয়াই, ত্রিপুরারা হারিবৈসুক, দ্বিতীয় দিন চাকমারা মূলবিজু, মারমারা সাংগ্রাইং আক্যা, ত্রিপুরারা বৈসুকমা ও তৃতীয় দিন চাকমারা গোজ্যেপোজ্যে দিন, মারমারা সাংগ্রাইং আপ্যাইং ও ত্রিপুরারা বিসিকাতাল নামে উদযাপন করে। উৎসবে প্রাণে প্রাণে তৈরি হয় উচ্ছ্বাসের বন্যা। সম্মিলন ঘটে পাহাড়ে বসবাসকারী সব জাতিগোষ্ঠী মানুষের।
এভাবে প্রত্যেক বছর বিপুল আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছিল উৎসবটি। কিন্তু এবার উৎসব কেড়ে নিলো বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস।
রাঙ্গামাটির অধিবাসী সঞ্জয় চাকমা জানান, তিনি তার জীবনে এ রকম বিজু পালন করতে দেখেননি। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর আমার মেয়েরা কাপ্তাই লেকে, নদীতে ফুল ভাসাই। কিন্তু এ বছর বাড়ির ছাদে ফুল ভাসিয়েছি।’
তার মেয়ে প্রত্যাশা চাকমা বলেন, ‘প্রতি বছর এই দিনে আমরা বন্ধুরা নদীতে, কাপ্তাই লেকে ফুল ভাসাতাম। কিন্তু এ বছর আমরা আমাদের ছাদে ফুল ভাসিয়েছি।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার বলেন, ‘প্রতি বছর বিজু উৎসব আমরা জাকজমকভাবে পালন করতাম। কিন্তু এবছর সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছি।’
Comments