নারায়ণগঞ্জে ৭ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ

বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সদর ও সোনারগাঁও উপজেলায় পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন সাতটি তৈরি পোশাক কারখানার কয়েক শ শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ফতুল্লা, টিপরদী ও কাঁচপুর বিসিক এলাকায় নিজেদের কারখানার সামনে অবস্থান করে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠায়।
তবে বিকেএমইএ-এর দাবি, লকডাউনের কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকায় বেতন দিতে বিলম্ব হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সোনারগাঁয়ে টিপরদী এলাকার ইউসান নিট কম্পোজিট লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে মহাসড়কে যানজট তৈরি হয়। পরে ১১টায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকদের বরাত দিয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ‘সাত মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু গণপরিবহন বন্ধ ছিল তাই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়নি। শ্রমিকেরা চলে যেতেই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।’
শ্রমিকেরা জানান, ইউসান নিট কম্পোজিট লিমিটেডে চার শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকরা গত ঈদের পর আর বেতন ভাতা পাননি। কারখানা কর্তৃপক্ষের টালবাহানায় সাত মাসের বেতন বকেয়া হয়েছে। গত ২৫ মার্চ মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সব বেতন ১৬ এপ্রিল পরিশোধের ঘোষণা দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়। ১৬ এপ্রিল সকালে শ্রমিকেরা কারখানায় এসে বন্ধ দেখে আন্দোলন শুরু করে।
এ বিষয়ে জানতে ইউসান নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ম্যানেজার মো. আকতার হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) শেখ বশির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইউসান গার্মেন্টস শ্রমিকদের মূলত গত দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তবে কোন কোন ইউনিটে কয়েকজন শ্রমিকের আরও বেশি বেতন বকেয়া রয়েছে। বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। আগামী রোববার সমস্যার সমাধান হবে। এই আশ্বাসে শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।’
এছাড়াও সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকার জয়া গ্রুপ ও কাঁচপুর বিসিক এলাকার রাহী নিট কম্পোজিট নামে দুটি কারখানার শতাধিক শ্রমিক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এ বিষয়ে শেখ বশির আহমেদ বলেন, ‘এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে জয়া গ্রুপের ৫০ জন শ্রমিক ও রাহি নিট কম্পোজিটের ৬০ থেকে ৭০ জন শ্রমিক বিক্ষোভ করে। মালিকপক্ষে সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ২৫ এপ্রিলের আগে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে ২৫ এপ্রিলের আগে মার্চ মাসের বেতনের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহরের চাষাঢ়া বিকেএমইএ এর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেছে সদর উপজেলার পুলিশ লাইন্স এলাকার ‘ইউনিটেক্স কটন ওয়্যার (প্রাঃ) লিমিটেড’ নামে কারখানার দুই শতাধিক শ্রমিক। তবে অফিস বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা কোন আশ্বাস না পেয়ে মিছিল নিয়ে ফিরে যায়।
কারখানার শ্রমিকেরা বলেন, ‘মার্চ মাসের বেতন যদি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেয়া হয় তাহলে দুই মাসের বাসা ভাড়া বকেয়া হয়ে যাবে। আমরা বাসা ভাড়া দেব নাকি খাবার কিনব? আগামী রোববারের মধ্যে আমাদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।’
এছাড়াও ফতুল্লার নরসিংপুর এলাকার সায়েম ফ্যাশন, কাঠেরপুর এলাকার কেকটেক্স গার্মেন্টস, চাঁদমারী এলাকার সান নীট গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করে। যার মধ্যে সায়েম ফ্যাশন নামে গার্মেন্টস কারখানার দুই শতাধিক শ্রমিক ঢাকা-ফতুল্লা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে (কাশিপুর-মুক্তারপুর সড়ক হিসেবে পরিচিত) বিক্ষোভ মিছিল করে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) শেখ বশির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সবগুলো গার্মেন্টসে ১৬ এপ্রিল বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকেরা এ বিক্ষোভ করে। তাদের আগামী সোমবার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করে যাচ্ছি। সব এক সঙ্গে সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এর জন্য আমরা বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ কে চিঠি দিয়েছি। যাতে দ্রুত বেতন পরিশোধ করে সমস্যা সমাধান করা হয়। অন্যথায় বেতন পরিশোধ না করার অপরাধে কারখানার মালিককেই গ্রেপ্তার করা হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলভ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যারা এখনও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি সেইসব কারখানার মালিক পক্ষকে আমরা বলেছি অবশ্যই যেন আজ অথবা আগামী রোববারের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। এমনকি তাদের সঙ্গে আজও ফোনে কথা চলছে। তাদের বলছি যেভাবে হোক শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করে দিবেন। বিকেএমইএর চেয়ারম্যান ও দুইজন পরিচালক এ বিষয়টি তদারকি করছেন।
তিনি আরও বলেন, কঠোর নির্দেশনা আমরা আগেই দিয়েছি, যেকোনো অবস্থায় মার্চ মাসের বেতন বিলম্ব করা যাবে না। তবে নারায়ণগঞ্জ লকডাউন ঘোষণা করায় অনেক ব্যাংক তাদের শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। যার জন্য লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা অনুরোধ করে গতকাল একটি ব্যাংক খুলিয়েছি। তারা তাদের গ্রাহকের টাকা দুই দিনে দিচ্ছে। এভাবে অন্য ব্যাংকগুলোকে অন্তত একদিনের জন্য খুলতে বলব। এসব কারণে বেতন দিতে দেরি হচ্ছে।
Comments